হযরত বড়পীর রহঃ তরীকতের পীরের পদে - বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী জীবনী Part 10

Boro Pir Abdul Kadir Jilani Ar Jiboni

হযরত বড়পীর (রহঃ) তরীকতের পীরের পদে

শায়খ আবু সাঈদ মােবারক ইবনে আলী ইবনে হুসাইন মাখযুমী কুদ্দেসা সিররুহুল আযীয
তাঁর আমলের শ্রেষ্ঠ কামেল ওলী ছিলেন। সাফীনাতুল আউলিয়া গ্রন্থে তাঁর কুনিয়াত আবু সাঈদের
পরিবর্তে আবু ইউসুফ লেখা আছে। কিন্তু অন্যান্য সব গ্রন্থে আবু সাঈদই লেখা আছে। তিনি
ছিলেন হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী এবং শায়খ আবুল হাসান ইবনে আলহানকারী (রহঃ)-এর মুরীদ
ছিলেন। শায়খ আবুল হাসান আলহানকারী আলেম, আমেল, আরেফ এবং কামেল বুযুর্গ ব্যক্তি
ছিলেন। শায়খুল ইসলাম ছিল তাঁর উপাধি। তারীখে ইবনে খালকানে উল্লেখ আছে যে, তিনি

ওতবা ইবনে আবু সুফইয়ান ছাখর ইবনে হারব ইবনে উমাইয়ার বংশধর এবং খুব উচ্চ শ্রেণীর
আবেদ ছিলেন। ইলম হাছিল করার জন্য তিনি বিভিন্ন স্থানে সফর করেছিলেন। তিনি হানকার
নামক স্থানের অধিবাসী ছিলেন। এ মুছেলের কাছে একটি স্থান। কেউ কেউ বলেন, হানকার
ক্দীদের একটি গােত্রের নাম। এরা মুছেলের নিকটবর্তী কোন একস্থানে বাস করত। শায়খ আবুল
হাসান কোরাইশী ৪০১ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। সাফীনাতুল আউলিয়া কিতাবের বর্ণনানুসারে

তিনি ৪৮৬ হিজরী সনে ইনতেকাল করেন

 শায়খ আবু সাঈদ মােবারক ইবনে আলী ইবনে হুসাইন মাথযুমীর মহত্ত্ ও শ্রেষ্ঠত্ব তা থেকেই
পরিমাপ করা যায় যে, তিনি বড়পর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) -এর খেরকা
প্রদানকারী পীব ছিলেন। হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) বলেন, একদিন আমার খুব ক্ষুধা
লেগেছিল। ঠিক ঐ সময়ে হযরত আবু সাঈদ মাখযুমী আমার কাছে তশরীফ এনে বললেন,
আমার বাড়িতে চল । একথা বলেই তিনি চলে গেলেন। কিন্তু আমি তাঁর বাড়িতে যেতে একট

চিন্তা-ভাবনা করলাম। এরই মাঝে হযরত খিযির (আঃ) এসে আমাকে সেখানে যেতে বললেন।

আমি সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম, হযরত শায়খ দরজায় দাড়িয়ে আমার অপেক্ষা করছেন।
আমাকে দেখে তিনি বললেন, 'আব্দুল কাদের! আমার বলা কি যথেষ্ট ছিল না? আবার খিযিরের
বলারও প্রয়ােজন পড়ে। সে তাঁর নিজের হাতে আমার মুখে গ্রাস তুলে দয়ে আমাকে খাওয়াতে
আরও করলেন। আমি পরিতৃপ্তি না পাওয়া পর্যন্ত তিনি আমাকে খাওয়াতেই থাকলেন। হযরত
গাওসুল আষম আবদুল কাদের জিলানী রহঃ) আরও বলেন, 'হযরত শায়খের হাতের যেই
লােকমাটি অমার মুখে যেত তা আমার অভ্যন্তরে এক অপূর্ব নূর ভরে দিত।

হযরত শায়খ আবু সাঈদ হযরত গওসুল আযম আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)-কে
বেলায়েতের খেরকা প্রদান করলেন এবং বললেন, 'এই সেই খেরকা যা জনাব হযরত রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) হযরত আলী (রাঃ)-কে দান করেছিলেন। তাঁর কাছ থেকে হযরত খাজা হাসান বসরী
(রহঃ) প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তারপর এক হাত হতে আরেক হাতে এভাবে আমার হাত পর্যন্ত
পৌছিয়াছে। আর সেইটা এখন আমি তােমাকে দান করছি। এই খেরকাটি পরিধান করামাত্র
হযরত গাওসুল আযমের উপর আল্লাহ্ তা'আলার নান ধরনের বরকত এবং তাজাল্লী আরও বেশি
পরিমাণে প্রকাশ পাইতে লাগল। হযরত শায়খ আবু সাঈদ মাকযুমী লিখেছেন, 'একে অন্য থেকে
বরকত লাভ করার উদ্দেশ্যে আমি হযরত শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ)-কে এবং তিনি
আমাকে খেরকা পরাইয়া দিলাম ও দিলেন।

মাদ্রাসায়ে বাবুল আযাজ যা বাগদাদ শরীফে হযরত গওসুল আযম সম্পর্কিত হয়ে থাকে,
হযরত শায়খ আবু সাঈদ (রহঃ)-ই তা প্রতিষ্ঠা করছিলেন এবং নিজের জীবিতকালেই এর পূর্ণতা
সাধনপূর্বক তা হযরত বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)-এর হাতে সােপর্দ করে
দিয়েছেন। হযরত আবু সাঈদ মাখযুমী (রহঃ) ৫১৩ হিজরীর ১লা মুহরবুম তারিখে ইন্তকাল
করেন।

বড়পীর (রহঃ)-এর ফত্ওয়া দান

একাদিক্রমে চল্লিশ বছর পর্যন্ত হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) মাদ্রাসার অধ্যাপনা
এবং ফতওয়া লেখার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। মাস্আলা-মাসায়েল সম্পর্কে তাঁর এত গভীর ও অফুরন্ত
জ্ঞান ছিল যে, ফতওয়া লিখার সময় গ্রন্থ দেখার কো দরকার হত না। কোন চিন্তা-ভাবনা না করেই
কলম নিয়ে জওয়াব লিখে দিতেন এবং জওয়াবও এমন নির্ভুল হত যে, সমস্ত ইরাক অঞ্চলের
আলেমগণ তা মেনে নিতেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তিনি ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আহমদ ইবনে
হাম্বল (রহঃ) মাযহাব অনুযায়ী ফতওয়া প্রদান করতেন।

একদা বিচিত্র রকমের একটি মাস্আলা এল। বড় বড় আলেম এবং ফাযেলগণও এরর উত্তর
প্রদানে করতে পারলেন না। আর সেই প্রশ্নটি ছিল, 'এক ব্যক্তি কসম করেছিল, যদি আমি এক
সপ্তাহের মধ্যে এমন কোন এবাদত না করি, যা সেই সপ্তাহে পৃথিবীর কোন মুসলমান করেনি,
তাহলে আমার স্ত্রীর উপর তিন তালাক হয়ে যাবে। যখন এ মাসআলাটি হযরত গাওসুল আযমের
খেদমতে এল, তিনি শুনামাত্রই তৎক্ষণাৎ লিখে দিলেন যে; 'প্রার্থীর কর্তব্য, হারাম শরীরে যেন
এমন ব্যবস্থা করে লয়, যে সপ্তাহে সে তওয়াফ করবে, সেই সপ্তাহে পৃথিবীর অন্য কোন মুসলমান
যেন খানায়ে কাবার তওয়াফ না করে, তাহাতেই এ এবাদত শুধু তার জন্য নির্দিষ্ট হবে এবং
পৃথিবীর কোন মুসলমান এ এবাদতে তার সঙ্গে শরীক হবে না। ফলে তার স্ত্রী তালাক থেকে বেঁচে

বড়পীর (রহঃ)-এর পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন

উম্মে খায়ের ফাতেমা (রহঃ)-এর গর্ভধারণের বয়স দশ মাস পূর্ণ হইয়ে গেল। তখন তাঁর
হৃদয়ে আনন্দের বন্যা বইতে লাগল। সন্তান জন্ম লাভ করা আর বেশি সময় বাকি নেই। মায়ের
গর্ভে সন্তান নড়া-চড়া করে তাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, অতি তাড়াতাড়িই সে পৃথিবীর আলাে-বাতাস

দশন  শাভ করবে। পুণ্াবরতী রমণী খুব সাবধানে চলাফেরা করতে লাগল। মহান আল্লাহ্ তাআলার
আদেশে সময় এসে গেল। চারশত একাত্তর হিযরী সাল, উনাত্রশ শাবান।। ঐ দিন রমযানের চাঁদ
দেখার কথা। কিছু পশ্চিমাকাশে কালাে যেঘের কারণে চাঁদ দেখা যায়নি। জিলান নগরে অগণিত
উৎসাহী জনতা রমযানের চাদ দেখার ব্যর্ত চেষ্টা করে নিজ নিজ ঘরে ফিরে গেল। সমস্ত রাত
মুসলধারে বৃ্ি হল। জিলান নগরের জনগণ এই অনাকাঙ্খিত বৃষ্টিপাত দেখে সকলে বিম্ময়ে

অভিভূত হয়ে গেল। রাত্রির দবিতীয় অংশ অতিক্রম করে তৃতীয় অংশে পদার্পণ করল। ঝড়-বৃষ্টির
মাত্রা বেড়েই চলেছে। চারদিকের বিপন্ন মানুষের করুণ সুর ভেসে আসছে। এমন সময় সাইয়্যেদ
মাৰু সালেহ মুসা (রহঃ)-এর ঘরে তাঁর স্ত্রী উম্মে খায়ের ফাতেমা (রহঃ)-এর প্রসব ব্যথা আরম্ভ
হল। সাইয়েদ আবু সালেহ মুসা (রহঃ) এই বিপদ মুহূর্তে প্রতিবেশীদের কাছে সাহায্যের আশায়
চেষ্টী করে বিফল হলেন। সে সময় একদল রমণী মুখে পর্দা ফেলে তাঁর গৃহে আগমন করলেন।
তারা সাহায্য করার জন্য এসেছেন, একথা সাইয়্যেদ আবু সালেহ (রহঃ)-কে জানিয়ে দিলেন।
তাদের আগমনের ফলে আবু সালেহ মুসা (রহঃ) অনেকটা আশ্বস্ত হলেন।

ক্রমেই গ্রসব যন্ত্রণা বাড়তে লাগল। অসহা যন্ত্রণায় উম্মে খায়ের ফাতেমা (রহঃ) অস্বস্তিবােধ
করতে লাগলেন। রাত্রি তৃতীয় প্রহর প্রায় শেষপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। ফযরের আযানের আর বেশি
দেরী নেই। এমন সময় সমস্ত যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়ে পৃথিবীতে আগমন করলেন আবদুল কাদের
জিলানী (বহঃ)।

নবাগত শিশুর মুখমণ্ডল অপূর্ব সুন্দর। স্বর্ণের মত তার কমনীয় কান্তি। সৌভাগ্য সম্বলিত
এ্রশস্ত কপাল, সরু ওষদ্বয়, কালাে ভ্রমর জোরা, মায়া জড়িত ভাসমান চক্ষুদ্বয়। নিখুঁত সুদর্শন ও
উজ্জবল কান্তি বৈশিষ্ট্য নয়নের মণির মুখ দেখে হযরত উম্মুন খায়ের ফাতেমা (রহঃ)-এর সমস্ত
বেদনা, দুঃখ যাতনা নিরমিষেই ভুলে গালেন। উপস্থিত মহিলাগণ নবাগত শিশুর রূপ দেখে
আনন্দিত হয়ে প্রশংসা করতে লাগল এবং উম্মে খায়ের ফাতেমা (রহঃ)-কে নানা ধরনের প্রবােধ
- বাক্য দিয়ে সান্তনা দিলেন।

অলীকুলের শীরমণি, মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রাব্বানী, সুতানুল আওলিয়া গাউসুল আযম
সাইয়্যেদ হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) চারশত একাত্তর হিযরী পহেলা রমজান,
মােতাবেক এক হাজার আটাত্তর খ্রিস্টাব্দে জিলান বা গিলান নগরে সাইয়্যেদ পরিবারে জন্মগ্রহণ
করেন। এজন্যে তাঁর নামের সাথে জিলানী শব্দটি সংযুক্ত করা হয়েছে।

বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী ( রহঃ ) এর জীবনী

Post a Comment

0 Comments