ভালোবাসার গল্প | প্রেমের গল্প - প্রেম কাহিনী | free bangla love story - love story bangla font #3

অনেক সুন্দর একটি ভালোবাসার গল্প

love story bangla font

গল্পের নাম ( অসম প্রেম কাহিনী )

Part: 3
ঝর্ণা যখন শিরীনের বাসায় ফোন করে তখন জায়েদ ক্লিনিকে ছিল। শিরীন তাকে ক্লিনিকে ফোন করে বলল, তােমার বন্ধুর সঙ্গে আমার বান্ধবীর একটু পরে বিয়ে হতে যাচ্ছে। ঝর্ণা ফোন করে আমাদের তাড়াতাড়ি যেতে বলল। তুমি এক্ষুনি চলে এস।

জায়েদ স্ত্রীর কাছ থেকে জেনেছে। ঝর্ণার জন্যই তার বন্ধুর এই পরিণতি। ঝর্ণার। বর্তমান মানসিক অবস্থার কথাও জেনেছে। লজ্জা পাবে মনে করে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে নি। এখন তাদের বিয়ের কথা শুনে আল্লাহপাকের শােকর গুজারী করে বলল, তাই নাকি?

তা হলে তাে এক্ষুনি যেতে হয়? শিরীন বলল, হ্যা, না গেলে তােমার বন্ধু যেমন তােমার উপর মনে কষ্ট পাবে, তেমনি আমার বান্ধবীও আমার ওপর মনে কষ্ট পাবে। তুমি দেরি না করে তাড়াতাড়ি চলে এস। তারা দু’জনে ঠিক সময়মতাে এসেছিল।

মামার নিষেধ উপেক্ষা করে নাজনীন যতটুকু পারল মামা-মামীর বাসর ঘর। সাজিয়েছে। বাসর ঘরে ঢুকে সাইফুল বিয়ের পােশাক চেঞ্জ করে ঝর্ণার হাত ধরে খাট থেকে নামিয়ে জড়িয়ে ধরে তার সমস্ত মুখে, ঘাড়ে, গলায় ও বুকে বেশ কিছুক্ষণ পাগলের। মতাে চুমাে খেতে লাগল। তারপর ঠোটে ঠোট রেখে ভিজে গলায় বলল, এতদিন পরে কেন তুমি আমার জীবনে এলে? তােমাকে দেয়ার মতাে আমার যে এখন আর কিছু নেই।

তােমার স্মৃতি নিয়ে এই দুনিয়া থেকে চলে যেতে চেয়েছিলাম, সেটাই বােধ হয়। ভালাে হত। তােমার ছবি, তােমার স্মৃতি, আমার হৃদয়ে পাথরে খােদাই করার মতাে। খােদিত করে রেখেছি।

তাই দেখে এতদিন বেশ কেটে যাচ্ছিল। কেন তুমি এই জীবন। সায়াহ্নে এসে ধরা দিলে? মৃত্যু আমার শয়রে দাড়িয়ে আছে জেনেও কেন যে তােমার কথায় রাজি হয়ে গেলাম, তা জানি না। হয়তাে আজীবনের সাধনার ফল হিসাবে। তােমাকে পাব জেনে মনটা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এখন অনুশােচনা হচ্ছে, জীবনের শেষ মুহূর্তে প্রিয়তমাকে পেয়ে কি লাভ হল? আমি তাে কয়েকদিনের মধ্যে। মরেই যাব।

তবে কেন তােমাকে বিয়ে করলাম? কেন তােমাকে দুঃখের সাগরে ভাসাতে গেলাম? দীর্ঘ দিনের ঘৃণার পাত্রকে কেন তুমি বিয়ে করলে? বল, বল প্রিয়তমা। আমি যে আর কিছু ভাবতে পারছি না। শুধু মনে হচ্ছে মৃত্যুর আগে আমি স্বপ্ন দেখছি না। তাে? এমন সময় লিভারের তীব্র যন্ত্রণা আরম্ভ হতে ঝর্ণাকে আলিঙ্গণ মুক্ত করে শুয়ে

পড়ে কাতরাতে কাতরাতে বলল কি
পার? আর যে সহ কত
তে কাতরাতে বলল, কি ভুলই না করে ফেললাম। এ নরক যন্ত্রণা থেকে আর কোনােদিন আরােগ্য লাভ করব না। তুমি আমাকে একটু বিষ এনে দিতে আর যে সহ্য করতে পারছি না। আমার জন্যে যদি তােমার অন্তরে একটু দয়াএ থাকে, তবে একটু বিষ এনে দাও প্রিয়তমা। আমি আমার প্রিয়তমার হাতের বিষকে অমৃত মনে করে খেয়ে; তার বুকে মাথা রেখে মরতে চাই।

ঝর্ণা প্রথম দিকে স্বামীর কথায় যেমন মরমে মরে যাচ্ছিল, তেমনি দুঃখে ও লাচনায় তার অন্তর ক্ষত বিক্ষত হচ্ছিল। পরে স্বামীর লিভারে যন্ত্রণা আরম্ভ হয়েছে পেরে সেও খাটে উঠে তাকে জড়িয়ে ধরে দরবিগলিত চোখে স্বামীর সারা মুখে খেতে খেতে বলল, থাম প্রিয়তম এবার থাম। আমি যে কত বড় অন্যায় করেছি, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। তােমার কষ্ট ও যন্ত্রণা আমাকেও সমভাবে কষ্ট ও যন্ত্রা দচ্ছে। আমি কেন তােমাকে বিয়ে করেছি শুনবে? তােমার কষ্ট ও যন্ত্রণা লাঘব করার জন্য। ইনশাআল্লাহ তােমাকে আমি ভালাে করে তুলবই।

এমন কি সে জন্যে যদি আমার জীবন উৎস্বর্গ করতে হয়, তাও করব। তবু তােমাকে আমি মরতে দেব না।। তারপর কাউকে কিছু না বলে নিজে ড্রাইভারকে সঙ্গে করে ডাক্তার নিয়ে এল। | ডাক্তার এসে সবকিছু শুনে তাকে একটা ঘুমের ইনজেকসান দিয়ে বললেন, এ রকম রুগী বাসায় রাখা ঠিক নয়। কখন কি হয় বলা যায় না। হসপিটালে ভর্তি করে দিন। ঝর্ণা কোনাে কথা না বলে ডাক্তারকে বিদায় করে সারারাত স্বামীর পাশে বসে বসে কাঁদতে কাঁদতে স্বামীর রােগ মুক্তির জন্য আল্লাহপাকের দরবারে দোয়া চাইল।

পরের দিন মনিরার সঙ্গে কথা বলে পিজির বড় বড় ডাক্তারদের কল দিয়ে বাসায়। এনে একটা বাের্ড তৈরি করে স্বামীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করল।
ডাক্তাররা বললেন, কোনাে ওষুধপত্র খেয়ে এ রােগ ভালাে হবে না। তবে মদ খাওয়া ছেড়ে দিলে কম থাকবে। সম্পূর্ণ ভালাে করতে হলে অপারেশন করাতেই হবে। মদ আর চুতে দেবেন না। আমরা ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করছি। একটু সুস্থ হওয়ার পর অপারেশন করাবেন।

ডাক্তারদের বিদায় করার পর ঝর্না মনিরাকে বলল, বুবু, আমি ওকে নিয়ে। সুইজারল্যান্ডে চলে যাব। সেখানকার আবহাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালাে। অপারেশন। যদি করাতে হয়, তা হলে সেখানেই করাব।

মনিরা বলল, বেশ, তুমি যা ভালাে বুঝ করবে, আমি বাধা দেব না।
আজ পনের দিন হল তাদের বিয়ে হয়েছে। মানসিক কিছুটা উন্নতি হলেও রােগের। তেমন উন্নতি হয় নি। প্রথম প্রথম তিন-চার দিন সাইফুল দৈনিক এক বােতল মদের জন্যে ঝর্ণার কাছে কাকুতি-মিনতি করেছে। ঝর্ণা না দিয়ে বলেছে, ঐ বিষ আর তােমাকে খেতে দেব না। আল্লাহ ও তার রাতূল (দঃ) যে জিনিসকে হারাম করেছেন, সে জিনিস কিছুতেই তােমাকে খেতে দেব না।

love story bangla font

love story bangla font

সাইফল রাগ সহ্য করতে না পেরে একদিন ঝর্ণার গালে একটা চড় মেরে বলল, যদি না দিতে পার, তা হলে আমার কাছে আর এস না, বুবুর কাছে থাকবে। চড় খেয়ে তার আমিনের কথা মনে পড়ল। সে মারত তাকে দিয়ে পাপ কাজ করিয়ে টাকা রােজগার করার জন্য। আর সাইফুল মারল, তাকে হারাম জিনিস খেতে দেই নি বলে । মারের আঘাতে ঝর্ণার চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে পড়ল। তবু হাসি মুখে বলল, ব্যাস,

শুধু একটা চড় মেরে কি আর কাজ হয়? আরাে যত ইচ্ছা মেরে রাগের ঝাল মেটাও, তবু কিন্তু একফোটাও তােমাকে মদ দিচ্ছি না। সাইফুল রাগের বসে মেরে মনে মনে অনুশােচনা করছিল। ঝর্ণার কথা শুনে মাথা নিচ করে ভিজে গলায় বলল, অসুস্থ শরীরে রাগের মাথায় কাজটা করে ফেলেছি। তারপর তার হাত দুটো ধরে চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, অন্যায় করেছি, মাফ করে দাও।

ঝর্ণা সাইফুলের চোখে পানি দেখে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে চোখ মুছে দিয়ে বলল, স্ত্রীর কাছে স্বামীর মাফ চাইতে নেই। তুমি যেমন আমার কোনাে অন্যায়কে মনে না। করে আনন্দ পাও তেমনি তােমাকে ভালবেসে আমিও তাই পাচ্ছি।

এই কয়েকদিনের মধ্যে স্বামীকে ঝর্ণা নামায ধরিয়েছে। তার আগে একদিন ঝর্ণা। সকালের দিকে বিছানা ঝেড়ে ঠিক করার সময় সাইফুলের বালিশের নিচে পাথর বসান। একটা রূপাের আংটি দেখে অবাক হয়ে সেটা নিয়ে সাইফুলের হাতে দিয়ে বলল, এটা। বালিশের নিচে পেলাম। কই, এই কদিন তাে তােমার হাতে এটা দেখি নি? আংটিটা দেখে সাইফুল চমকে উঠল। তখন তার সেই ফকিরের কথা মনে পড়ল ।

যে দিন ঝর্ণার বিয়ের কথা শুনে সারাদিন নামায না পড়ে রাত্রে মদ খেয়ে বাসায়। ফিরেছিল, তারপরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আংটি হাতে না দেখে অনেক খুজাখুজি করেছে। কিন্তু পায় নি। তখন সে ভেবেছিল, গতকাল নামায পড়ি নি, তার ওপর মদ খেয়েছি, তাই ফকিরের কথামতাে আংটি চলে গেছে। তারপর সে আংটির। কথা একদম ভুলে গিয়েছিল। সেই আংটি ফিরে পেয়ে ভাবল, আল্লাহ এতদিন।

অপকর্মের জন্য আমার উপর অসন্তুষ্ট ছিল। ঝর্ণা এসে সেই অপকর্ম বন্ধ করে দিয়েছে। বলে আল্লাহ আবার সেই আংটি ফিরিয়ে দিয়েছেন। কৃতজ্ঞতায় ও আনন্দে তার চোখ। পানিতে ভরে উঠল।

স্বামীকে আংটির দিকে এতক্ষণ তাকিয়ে থেকে চিন্তা করতে দেখে ও তার চোখে পানি দেখে ঝর্ণা বেশ অবাক হয়ে বলল, কি ব্যাপার, আংটিটা দেখে এত কি ভাবছ? আর তােমার চোখে পানি কেন?

সাইফুল ঝর্ণার কপালে একটা চুমাে খেয়ে বলল, তােমার এই কপালের গুণে। আমার ভাগ্যকে ফিরে পেলাম। ঝর্ণা আরাে অবাক হয়ে বলল, ব্যাপারটা খুলে বলবে তাে?
সাইফুল আংটি কিভাবে পেয়েছিল এবং তারপর সে কি করে এই সাহেবের ছেলে। আরজু হয়ে লেখাপড়া করল, তা সব বলল। ঝর্ণা বলল, সব কিছু আল্লাহর ইচ্ছায় হয়ে থাকে। কিন্তু নামায ছাড়লে কেন? ছােটবেলা থেকে তাে নামায পড়তে।।

সাইফুল বলল, তােমার বিয়ে হয়ে গেছে জানতে পেরে আমি আর আমার মধ্যে ছিলাম না । আজ সকাল থেকে সাইফুলের সহ্যমত লিভারের যন্ত্রণা হচ্ছে। যন্ত্রণা শুরু হওয়ার পর পরই ঝর্ণা ডাক্তার আনিয়েছিল। দুপুরের দিকে একটু কমতে তাকে ভাত খাইয়ে শুতে বলল । সাইফুল ঘুমিয়ে পড়তে যে ওষুধটা এখানকার দোকানে পাওয়া যায় নি, সেটা কেনার জন্য মিটফোর্ড গেল। সেখানেও অনেক দোকানে না পেয়ে আরাে অনেক দোকানে খোঁজ করতে করতে শেষে একটা দোকানে পেল। বিদেশী ওষধ, তার উপর মার্কেটে

নেই। দোকানদার তিন-চারগুণ বেশি দাম রাখল। ঝর্ণা তা বুঝতে পেরেও কিছু বলল না। ওষুধটা যে সে পেল এটাই সৌভাগ্য বলে মনে করল। তার ফিরতে বেশ দেরি হল।। এদিকে জোহরের আযান শুনে সাইফুলের ঘুম ভেঙ্গে যায়। উঠে নামায পড়ার সময় আবার লিভারের যন্ত্রণা শুরু হল। কোনাে রকমে চার রাকায়াত ফরজ নামায আদায় করে বিছানায় শুয়ে ছটফট করতে লাগল, ঝর্ণা তুমি কোথায় গেলে, আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না।

আল্লাহ গাে তুমি আমাকে মাফ করে দাও। আমার পাপের। ফল আর কতদিন দিবে? ইয়া আল্লাহ, তুমি রহমানুর রহিম, আমার উপর রহম কর। সে খাটের উপর গড়াগড়ি দিতে দিতে আর ঐ সব বলে কাতরাতে লাগল।

কাজের মেয়ে সাবুর মাকে মনিরা কয়েক দিন হল এই বাসায় রেখেছে। সে। সাহেবের কাতরানির আওয়াজ পেয়ে রুমে এসে বলল, কিছু লাগবে সাহেব?। সাইফুল বলল, তােমার আপা কোথায়? জলদি তাকে ডেকে দাও।। সাবুর মা বলল, আপা ওষুধ কিনতে গেছেন। যাওয়ার সময় আপনার দিকে। আমাকে লক্ষ্য রাখতে বলে গেলেন।

সাইফুল বলল, তুমি কি লক্ষ্য রাখবে? যাও এখান থেকে। তারপর কাতরাতে কাতরাতে আবার বলল, এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে কেন? বাইরে গিয়ে দেখ, তােমার আপা আসছে কিনা। ঝর্ণা ফিরে এসে বারান্দা থেকে স্বামীর কাতরানি শুনতে পেয়ে প্রায় ছুটতে ছুটতে আসার সময় সাবুর মায়ের সঙ্গে দেখা।।

সাবুর মা বলল, আপা জলদি যান, সাহেবের বােধ হয় আবার পেটের যন্ত্রণা হচ্ছে। কখন থেকে আপনাকে ডাকাডাকি করছেন। | ঝর্ণা রুমে এসে তাড়াতাড়ি বােরখা খুলে ওষুধের শিশি থেকে দুটো ট্যাবলেট বের করে স্বামীকে খাইয়ে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলল, তােমাকে ঘুমাতে দেখে এই ওষুধটা আনতে মিটফোর্ড গিয়েছিলাম। তারপর আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতে লাগল, ইয়া আল্লাহ, তুমি সর্বজ্ঞ।

তােমার অজানা কিছুই নেই। তুমি আমাদের দীলের খবর জান। আমরা আমাদের কৃত গােনাহর জন্য মাফ চাইছি। তুমি মাফ না করলে আর কে করবে? তুমি গােনাহ মাফ করে দিয়ে আমার স্বামীকে আরাম দাও। তাকে আরােগ্য করে দাও। আমার জন্য আমার স্বামী এই রকম কষ্ট পাচ্ছে।

তুমি আমার স্বামীর রােগ আমাকে দিয়ে তাকে ভালাে করে দাও। তা না হলে আমাকে যত খুশী শাস্তি দিয়ে তার রােগের উপশম কর। আমি একমাস নফল রােযা রাখার ও একশত রাকাত নফল নামায পড়ার মানত করছি। তােমার পেয়ারা রাসূল হযরত মহাম্মদ মােস্তফা (দঃ) এর রওজা মােবারকে শত কোটী দরুদ ও সালাম জানিয়ে। দোয়া করছি, তুমি আমার দোয়া কবুল কর, আমিন সুম্মা আমিন, তারপর সে স্বামীর।

মুখটা দু’হাত দিয়ে ধরে সারা মুখে চুমাে খেতে খেতে বলল, তােমার জ্বিটা আমার। মুখের মধ্যে দাও। আমি চুষবাে, যাতে করে তােমার রােগটা আমার মধ্যে সংক্রামিত হয়। তােমার কষ্ট আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না, কথা শেষ করে স্বামীর ঠোটে নিজের ঠোট ঘষতে ঘষতে বলল, কই দাও না তােমার জ্বিবটা আমার মুখের মধ্যে।
সাইফুল স্ত্রীর কথা ও আচরণ দেখেশুনে লিভারের যন্ত্রণা ভুলে গিয়ে চিন্তা করল, ঝর্ণা আমাকে এত ভালবাসে? মনে হচ্ছে আমার কষ্ট দেখে ওর যেন আমার থেকে বেশি।

কষ্ট হচ্ছে। ওষুধ খাওয়ার ফলে যন্ত্রণাও আস্তে আস্তে কমে আসছে।
বলল, আল্লাহ নিশ্চয় তােমার দোয়ার বরকতে আমাকে ভালাে করে দেবেন। অত অস্থির হয়ে পড়ছ। কেন? তুমিই তাে বলেছ কুরআনপাকে আছে আল্লাহ সবুরকারীদের সঙ্গে থাকেন।

ঝর্ণা স্বামীকে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে শুনে বুঝতে পারল, তার যন্ত্রণা কমেছে। আলিঙ্গনমুক্ত হয়ে উঠে বসে স্বামীর চোখ-মুখ মুছিয়ে দিয়ে নিজের চোখ মুছতে মুছতে বলল, তুমি আমার সমস্ত অপরাধ মাফ করে পায়ে ঠাই দিয়ে আমাকে ধন্য করেছ। কিন্তু আমি যে তার প্রতিদানে কিছুই দিতে পারছি না। আমার প্রাণ উৎসর্গ করে যদি তােমাকে আরােগ্য করতে পারতাম, তা হলে আমার জন্ম সার্থক হত।

সাইফুল বলল, ঝর্ণা, এবার তুমি থাম। জীবন উৎসর্গ করার জন্য তােমাকে আমি। বিয়ে করি নি। এত বছর সবুর করে তােমাকে পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে আকুল প্রার্থনা করেছি। তিনি আমার প্রার্থনা কবুল করে তার এই নাদান বান্দাকে কৃতার্থ। করেছেন। সেই জন্যে চিরকাল তার পবিত্র দরবারে শুকরিয়া আদায় করতে থাকব। তুমি একটু আড়াল হলেই মনে হয়, আমার দেহে প্রাণ নেই। তােমার কিছু হলে আমি হার্টফেল করে মরে যাব।

অনেক অপেক্ষা, অনেক তিতীক্ষার পর আল্লাহ তােমাকে মিলিয়েছেন। তুমি আর ঐসব কথা কোনােদিন মুখে আনবে না।
ঝর্ণা স্বামীর উপর উপুড় হয়ে আবার সারা মুখে চুমাে খেতে খেতে বলল, তুমি চুপ কর। তােমার মনের সব কথা জানি। তারপর তার পাশে বসে আবার বলল, মনে হয়। আল্লাহপাকের রহমতে তােমার যন্ত্রণা একটু কমেছে। এবার ঘুমাবার চেষ্টা কর, আমি তােমার চুলে বিলি কেটে দিই।

সাইফুল তার কোলে মাথা রেখে বলল, আমি ঘুমিয়ে গেলেও আমার কাছে থাকবে বল? থাকব। শুধু নামায পড়ে ভাত খেতে যাব। তুমি নামায পড়েছ?। হা পড়েছি। তুমি নামায পড়ে এখানেই ভাত খাও। সাবুর মাকে ভাত দিয়ে যেতে বল । |

ঠিক আছে, তাই বলছি। তারপর সাইফুলের মাথার নিচে একটা বালিশ দিয়ে। বাথরুম থেকে অযু করে এসে নামায পড়ে খেয়ে উঠে স্বামীর পাশে যখন বসল তখন সাইফুল ঘুমিয়ে পড়েছে। স্বামীর দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল, গরিব বলে যে সাইফুলকে স্কুল লাইফ থেকে ঘৃণা করে এসেছি, সেই সময় প্রেমের চিঠি দিয়েছিল বলে। যাকে হেডস্যারের হাতে মার খাইয়ে দেশ ছাড়া করেছি, ইউনিভার্সিটিতে আলাপ করতে এলে কয়েকবার যাকে অপমান করেছি, যাকে অপমান করার জন্যে তার সামনে। আমিনের সঙ্গে মাখামাখি করেছি এবং শেষে তাকে জব্দ করার জন্য আমিনকে বিয়েও।

করেছি, কিন্তু তবু সে আমার পিছু ছাড়ে নি। বিয়ের পর একদিন আমিনের অনুপস্থিতিতে তার বাসায় গিয়ে আমাকে বলেছিল, ঝর্ণা, তুমি আমাকে অপমান ও জব্দ করার জন্যে যত রকমের চেষ্টা কর না কেন, তুমি আজীবন আমার বুকের মধ্যে আত্মার পাশাপাশি বাস করবে। আত্মা ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচে না, তেমনি তােমাকে অথবা তােমার স্মৃতি না হলে আমিও বাঁচব না। আমি আমৃত্যু তােমার জন্য অপেক্ষা করব।' তখন সাইফুলের কথা শুনে তার মনে হয়েছিল, ছেলেটার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আর।

আজ সেই ঘৃণিত ও অবহেলিত সাইফুল যেন তার আত্মা। সাইফুলের কিছু কষ্ট হলে মনে হয় তারই বেশি কষ্ট হচ্ছে। এই সব ভাবতে ভাবতে ঝর্ণার চোখ দিয়ে পানি। পড়তে লাগল। আসরের নামাযের আযান শুনে স্বামীকে জাগিয়ে দ’জনে নামায় পড়ল।

প্রতিদিন বিকেলে সাইফুলের ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে পল্টনের বাসায় গিয়ে মনিরা ও নাজনীনকে এই বাসায় নিয়ে আসে। আবার রাত্রে খাওয়া-দাওয়ার পর তাদেরকে সেই বাসায় পৌছে দেয়। এই সময়টা মনিরা ভাইয়ের সেবা যত্ন করে । নাজনীন কিছু সময় মামার কাছে কাটিয়ে মামীর সঙ্গে নানা রকম গল্প করে কাটায়। বিয়ের পর থেকে নাজনীন ঝর্ণাকে মামী বলে ডাকে। সাইফুল ও ঝর্না নামায পড়ে বসে কথা বলছিল। এমন সময় মনিরা ও নাজনীন এল।

সালাম বিনিময় করে মনিরা জিজ্ঞেস করল, তােদের দুজনের মুখ এত শুকনাে দেখাচ্ছে কেন? আজ কি যন্ত্রণা বেশি হয়েছে। ঝর্ণা বলল, হ্যা বুবু সকাল থেকে যন্ত্রণা অল্প অল্প হচ্ছিল, দুপুরের পর বেশি হয়। আমি ডাক্তার এনেছিলাম। উনি বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে একটু তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা। করতে বলে গেলেন। তা কতদূর কি করেছ? | পি. জি. র ডাক্তাররা ব্যবস্থা করেছেন। প্রায় সব ঠিক হয়ে গেছে। ইনশাআল্লাহ। সামনের সপ্তাহে রওয়ানা দেব।

নাজনীন বলল, আমি তােমাদের সঙ্গে যাব। সাইফুল বলল, এখন আর কি করে তা সম্ভব? আগে বললে ব্যবস্থা করা যেত।

সুইজারল্যান্ডে ওরা প্রায় এক বছর হতে চলল এসেছে। সাইফুল এখন সম্পূর্ণ সস্থ। হাসপাতালে সাইফুল পাচ মাস ছিল। সাইফুলের যখন অপারেশন হয় তার এক। সপ্তাহ আগে থেকে ঝর্ণা তার মানত করা রােযা রাখতে এবং নফল নামায পড়তে আরম্ভ করে। আবার অপারেশন যাতে সাকসেসফুল হয়, সে জন্যও ঐ সবের মানত করে। সাইফল হাসপাতালে থাকার সময় সে সব মানত পূরণ করেছে। সাইফুল প্রথমে।

অপারেশন করাতে রাজি হয় নি। ঝর্ণা তাকে অনেক বুঝিয়ে রাজি করিয়েছে। সাইফল। রাজি হওয়ার আগে তাকে বলেছে, কেন অপারেশন করতে চাচ্ছি না জান? যদি। এ্যাকসিডেন্টলি আমি মরে যাই, তা হলে তােমার যে কষ্ট হবে, তা কি তমি সহ্য করতে পারবে? আমার আশা আল্লাহ পূরণ করেছেন। এখন তার ইচ্ছায় যদি কিছু হয়, তা হলে আমার এখন আর কোনাে খেদ নেই। শুধু তােমার কথা ভেবে রাজি হচ্ছি না। |

ঝর্ণা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলেছে, আল্লাহ না করুন, যদি তােমার কিছু। হয়ে যায়, তা হলে নির্ঘাৎ আমিও দম ফেটে মারা যাব । এবার আমি কেন করাতে চাচ্ছি।

শােন, প্রতিদিন তুমি যে কষ্ট ভােগ করছ, তােমার হায়াৎ যতদিন থাকবে ততদিন সেই কষ্ট ভােগ করতে হবে। আল্লাহ হায়াৎ-মউতের মালিক। তিনি যতদিন তােমার হায়াৎ রেখেছেন, ততদিন অপারেশন করালেও বাচবে আর না করালেও বাচবে।

আল্লার উপর বিশ্বাস হারাচ্ছ কেন? জান না বুঝি, পাঁচটা জিনিস আল্লাহপাকের হাতে। সেগুলােতে মানুষের কোনাে এখতিয়ার নেই। সেগুলাে হল-হায়াৎ, মউত, রেযেক, ধন-দৌলত ও মান-ইজ্জৎ। যদিও বা আমরা অনক সময় দেখি, মানুষ নিজের চেষ্টায় সভাবে হােক বা অসম্ভবে হােক এগুলাের কোনাে একটায় সফলতা অর্জন করেছে, তা হলে বুঝতে হবে সেটা তার তকৃদিরে ছিল। প্রত্যেক মুসলমানের তকুদিরকে বিশ্বাস করতেই হবে। তুমি জান কি না জানি না, সাতটা জিনিসের উপর পূর্ণ বিশ্বাস না করলে কেউ খাটি মুসলমান হতে পারে না।।

সাইফুল জিজ্ঞেস করল, সেগুলাে কি কি?
ঝর্ণা বলল, (১) আল্লাহ, (২) ফেরেস্তাগণ, (৩) আসমানী গ্রন্থসমূহ, (৪) আল্লাহর। প্রেরিত পুরুষগণ, (৫) কেয়ামত, (৬) তকদির অর্থাৎ আল্লাহপাক ভালােমন্দ নির্ধারনকারী, (৭) মৃত্যুর পর পূর্ণজীবন। কথা শেষ করে সাইফুলকে তার মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করল, অমন করে কি দেখছ? সাইফুল বলল, আজকের ঝর্ণাকে কয়েক বছর আগের ঝর্ণার সঙ্গে মিলিয়ে দেখছি। ঝর্ণা ছলছল চোখে বলল, কি দেখলে? সাইফুল বলল, তাদেরকে একই দেখলাম, শুধু আগের ঝর্ণার দ্বীনি এলেম ছিল না।

ঝর্ণা চোখের পানি মুছে বলল, যদি আল্লাহ আমাকে সেই সময় দ্বীনি এলেম দান করতেন, তা হলে দু’জনকে এত কষ্ট ভােগ করতে হত না। তারপর অনেক বুঝিয়ে ও কান্নাকাটি করে তাকে রাজি করিয়ে অপারেশন করিয়েছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সাইফুলের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য এবং সেখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য ও জলবায়ু ভালাে লাগায় তারা এতদিন রয়েছে। সাইফুল তার প্রিয়তমা স্ত্রী ঝর্ণাকে নিয়ে পাহাড়ী ঝর্ণা দেখে বেড়াচ্ছে।

তাকে সঙ্গে নিয়ে পাহাড়ের কোলে ঝর্ণার ধারে বসে গল্প করে। আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি মহিমার গুণকীর্তন করে। আর ঝর্ণা তার প্রতি। সাইফুলের প্রেম ও ভালবাসা উপলব্ধি করে নিজেকে স্বামীর মধ্যে বিলীন করে দিয়েছে। মাঝে মাঝে যখন একা থাকে তখন কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়ে ভেবেছে, আমি হীরের। টুকরাে পায়ে ঠেলে একজন ঘৃণ্য, ইতর ও শয়তানের পিছনে ঘুরেছি।

একদিন কথায় কথায় ঝর্ণা বলল, ভার্সিটিতে পড়ার সময় শুনেছিলাম, তুমি বিখ্যাত কুংফু মাস্টার। সে সব ছেড়ে দিলে কেন? সাইফল বলল, যে কারণে আমি মদ ধরেছিলাম, সেই একই কারণে কুংফু মাস্টারী। ছেড়ে দিয়েছি। এমন সময় হােটেলের পিয়ন একটা চিঠি দিয়ে গেল। সাইফুল চিঠিটা দেখে বুঝতে পারল বুবু দিয়েছে। সে ঝর্ণাকে পড়তে বলল ।

ঝর্ণা জোরে জোরে চিঠিটা পড়ে বলল, বুবু বারবার চিঠি দিচ্ছে ফিরে যাওয়ার। জন্য। অনেক দিন হয়ে গেল, এবার ফেরা দরকার। তা ছাড়া ব্যবসাপত্র কি ভাবে চলছে, সেটাও চিন্তা করা উচিত।
সাইফল তাকে আলিঙ্গনবদ্ধ করে বলল, আমি ক্লাস সিক্স থেকে আল্লার কাছে শুধু তােমাকে চেয়েছি। বাড়ি, গাড়ি, ব্যবসাপত্র কিছুই চাই নি। তােমাকে দেয়ার আগে।

bangla love story

free bangla love story

ডনি ঐ সব দিয়ে আমার প্রেমকে পরীক্ষা করেছেন।
তােমার যখন বিয়ে হয়ে গেল। তখন করআন-হাদিসের ভালাে জ্ঞান না থাকায় তা বুঝতে না পেরে নামায-রােযা ছেড়ে দিয়ে তােমাকে ভুলে থাকার জন্য মদ ধরি। তারপর তারই অপার করুনায় আমাকে শাস্তি দিয়ে তােমাকে আমায় দান করলেন এবং আমার জ্ঞানের চোখ খুলে দিলেন। সেই জন্যে তার পাক দরবারে কোটি কোটিবার শুকরিয়া আদায় করেছি এবং আজীবন করতে থাকবাে। তােমাকে ছাড়া এ দুনিয়ায় আমার আর কোনাে কিছু কাম্য ছিল না, এখনও নেই, ভবিষ্যতেও থাকবে না। স্বামীর কথা শুনতে শুনতে ঝর্ণার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল।

আঁচলে চোখ মুছে। বলল, তুমি যে আমাকে এত ভালবাস, আমি কি তার উপযুক্ত? আমি কি তােমা প্রেমের কণামাত্র প্রতিদান দিতে পারছি?
সাইফুল তাকে আলিঙ্গন মুক্ত করে দু’হাতে তার মাথা ধরে সারা মুখে চুমােয়।

চুমােয় ভরিয়ে দিয়ে বলল, তােমার কাছ থেকে কতটুকু কি পেলাম না পেলাম, সেদিকে কখনাে খেয়াল করি নি। তােমায় পেয়ে আমার আশা-আকাংখা পূর্ণ হয়েছে, সেটাই আমার কাছে সব থেকে বড় পাওয়া। তবু তুমি আমার জন্য যা কিছু করছ, তাতে করে আমার মনে হয়, পৃথিবীর কোনাে মেয়েই বােধ হয় তার স্বামীকে এত ভালবাসে না, এত প্রেমও দেয় না।

দেশে ফিরে ব্যবসা দেখতে গেলে, সারাদিন তােমাকে ছেড়ে থাকতে হবে মনে করলে ফিরতে ইচ্ছা করে না। ঝর্ণা স্বামীর মাথা ধরে সারা মুখে প্রতিদান দিয়ে বলল, স্টপ, প্লিজ স্টপ। তােমার প্রেমের তুলনায় আমারটা কোটি কোটি ভাগের এক ভাগও নয়।

আমাকে ছেড়ে সারাদিন ব্যবসার জন্য বাইরে থাকার কথা যে বললে, তা ঠিক নয়। পুরুষের পুরুষত্ব থাকতে হবে। বৌয়ের কাছে সব সময় থাকলে লােকে স্ত্রৈণ বলবে। তা হওয়া তােমার চলবে না। আমি আমার প্রিয়তম স্বামীকে পুরুম দেখতে চাই। আমার জন্য লােকে গেমায় নিন্দে করবে, তা আমি সহ্য করতে পারব না।

তা ছাড়া আল্লাহপাকের রহমতে ভবিষ্যৎ বংশধর আসছে। তার জন্য তােমার কি কিছু করা উচিত না?
সাইফুল ইঙ্গিতটা বুঝতে পেরে আনন্দে তাকে পাজাকোলা করে তুলে দু'তিন পাক। ঘুরপাক খেয়ে আদর-সােহাগে অস্থির করে তুলল। | ঝর্ণা প্রতিদান দিতে দিতে বলল, এই কি হচ্ছে? প্লীজ, ছেড়ে দাও। এই সময় এই রকম করা ঠিক নয়।

সাইফুল তাকে খাটে বসিয়ে বলল, তুমি ঠিক কথা বলেছ, আমার সে কথা মনেই নেই। তারপর আবার বলল, তুমি মা হতে চলেছ, এতদিন বলনি কেন বলে তাকে শুইয়ে তার ঠোটে একটু জোরে কামড়ে দিয়ে বলল, অন্যায়ের শাস্তি দিলাম। তারপর তার বুকে মাথা রেখে জিজ্ঞেস করল, ক'মাস?

ঝর্ণা তাকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলল, অত জোরে কামড়ালে ব্যথা লাগে না বুঝি?
সাইফুল বলল, লাগবার জন্যই তাে কামড়ালাম। বললাম না, অন্যায়ের শাস্তি? এখন যা জিজ্ঞেস করলাম বল ।।
যাও বলব না, আমার লজ্জা করছে। পাক লজ্জা, তবু বল।। বলব না।।

সাইফুল তার হাত দুটো ধরে মুখের উপর ঝুঁকে পড়ে বলল, বল বলছি, নচেত কামড়ে ঠোট ফুলিয়ে দেব।
ব্যাথা পাব না বুঝি? সেই জন্যে তাে কামড়াব। তুমি বলছ না কেন?
তিন মাস বলে ঝর্ণার মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেল। সে তাকিয়ে থাকতে না পেরে চোখ বন্ধ করে নিল।

সাইফুল তার হাত ছেড়ে দিয়ে আলতাে করে তার ঠোটে চুমাে খেয়ে বলল, এবার তা হলে দেশে ফিরতেই হয় কি বল? ঝর্ণা স্বামীর মাথা বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, ইনশাআল্লাহ ফিরব। এবার একটা কথা বলি? বল।।

একটা কথা ভেবেছি। কি ভেবেছ বলবে তাে।
আমি তাে তােমার অফিসের ম্যানেজারের এতদিন পি. এ. ছিলাম। দেশে ফিরে। অফিসের সাহেবের পি.এ. হতে চাই। সাহেবের স্ত্রী হয়ে থাকতে বুঝি আর ভালাে লাগছে না? সাহেব যে বলল, সে তার স্ত্রীকে ছেড়ে সারাদিন অফিসে থাকতে পারবে না। পি. এ. হলেও তাে সাহেবের কাছে থাকতে পারছ না। পাশের রুমে থাকবে। তা হলে তাে সেই একই কথা।।

তা কেন? সাহেব যলন ইচ্ছা ডেকে কাজের বাহানায় সামনে বসিয়ে রাখবে। আজকাল তাে অফিসের বসরা সুন্দরী যুবতী মেয়ে স্টাফদের যখন তখন কাজের বাহানায় ডেকে খােশ গল্প করে। সাইফুল বুঝতে পারল, ঝর্ণা আগের অভিজ্ঞায় তার সঙ্গে ইয়ার্কি করছে। বলল, দেখ, বেশি ফাজলামী করলে কামড়ে গালের মাংস তুলে নেব। তখন টের পাবে। তারপর একটু আহত স্বরে বলল, আমি ঐসব নােংরা ফাজলামি ভালবাসি না।

ঝর্ণা নিজের ভুল বুঝতে পেরে হাত জোড় করে বলল, অজ্ঞানতার কারণে অন্যায়। করে ফেলেছি, দয়া করে মাফ করে দাও।। তার সঙ্গে ফাওটাও দিচ্ছি বলে সাইফুল তাকে জড়িয়ে ধরে চুমাে খেতে লাগল ।।

দীর্ঘ এগার মাস পরে তারা ফিরে এল । মনিরা ও নাজনীন ঝর্ণার প্রেগনেন্সির কথা শুনে খুশী হল। সাইফুল ভবিষ্যৎ বংশধরের চিন্তা করে ব্যবসায় মন দিল। মাসখানেক পর মনিরা একদিন সাইফুলকে বলল, আমরা সবাই এ বাড়িতে চলে আসি। ওখানে আমার একদম মন টিকে নি।

অত বড় বাড়িতে নাজনীনকে নিয়ে। থাকতে ভালাে লাগছে না। শুধু শুধু আমাদের দুজনের জন্য বাড়িটা ফেলে রাখবি। কেন? তারচেয়ে ভাড়া দিয়ে দে। এ বাড়িতে কত রুম খালি পড়ে আছে। তা ছাড়া ঝর্ণার পেটে বাচ্চা। ওকে এখন সাবধানে রাখতে হবে। ওর দিকে লক্ষ্য রাখবে কে? তুই তাে সারাদিন অফিসে থাকিস।।

সাইফুল বলল, বুবু, তুমি ঠিক কথা বলেছ। সেই ব্যবস্থাই করব।
মনিরা বলল, আর একটা কথা, তােরা দু'জনেই ছেলে মানুষ। তাই বলছি, ঝর্ণাকে নিয়ে তই একবার দেশে যা। তাের শ্বশুর-শাশুড়ীকে সালাম করে ওনাদের দোয়া নেয়া কর্তব্য। তা ছাড়া ঝর্ণা ওনাদেরকে যেমন অনেক দিন দেখে নি, তেমনি ওনারা মেয়েকে ঘর থেকে বের করে এতদিন মানষিক যন্ত্রণায় ভুগছেন। যত তাড়াতাড়ি পারিস ওনাদের সঙ্গে দেখা করে আয়। আর সেই সঙ্গে আব্বা জহুর চাচাকে আমাদের ঘরে রেখে যে সমস্ত আবাদি জমি-জায়গা ভাগ চাষে দিয়ে এসেছিল, সেসবের হিসাবপত্র করে আমদের পাওনা আদায় করবি।

সাইফুল বলল, তুমি খুব ভালাে কথা বলেছ, এটা করা একান্ত উচিত। তােমরা কালকেই গােছগাছ করে এখানে চলে আস। আমি দু'একদিনের মধ্যে ঐ বাড়ির সব মালপত্রও এখানে নিয়ে চলে আসব। তারপর সামনের মাস থেকে ভাড়া দেয়ার ব্যবস্থা করব।

মামা-মামী দেশে যাবে শুনে নাজনীন বলল, আমিও তােমাদের সঙ্গে যাব।। ঝর্ণা বলল, নিশ্চয় যাবে। তারপর মনিরাকে বলল, বুবু তুমিও চল না । মনিরা বলল, আগে তােরা ঘুরে আয়, তারপর কাউকে নিয়ে আমি পরে যাব। বাসায় একজনকে থাকতে হবে না?

মনিরা ও নাজনীন গুলশানের বাসায় চলে আসার এক সপ্তাহ পর সাইফুল ঝর্না ও নাজনীনকে নিয়ে গাড়ি করে রওয়ানা দিল। নাজনীন সামনে সিটে বসেছে। আর ওরা দু’জন পেছনে। পথে একসময় সাইফুল ঝর্নাকে বলল, তােমার বাবা ও ভাইয়ারা আমাকে চেনেন।

যদি আমাকে অপমান করেন? ঝর্ণা বলল, বুবু যেদিন দেশে যাওয়ার কথা তােমাকে বলল, সেই দিনই আমি আব্বাকে চিঠি দিয়ে সব কিছু জানিয়েছি। আর সেই সঙ্গে নাজনীনকে নিয়ে আমরা যে আজ রওয়ানা দেব, সে কথাও টেলিগ্রাম করে জানিয়েছি।

সাইফুল বলল, সত্যি মাঝে মাঝে আমি তােমার বুদ্ধি দেখে অবাক হয়ে যাই। সে জন্যে তােমাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। নাজনীন শুনতে পেয়ে বলে উঠল, মামা, ধন্যবাদে আমারও কিছু অংশ পাওনা। আছে। টেলিগ্রাম করার বুদ্ধিটা আমি মামীকে দিয়েছিলাম। সাইফুল হেসে উঠে বলল, তুইও তাে দেখছি বেশ বুদ্ধিমতী হয়ে উঠছিস?

বহুদিন পর মেয়ের চিঠি পেয়ে হামিদ সাহেবের চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল। সেসময় রাগের মাথায় যা তা বলে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন ঠিক; কিন্তু দিনের পর দিন তার। খোজ না পেয়ে খুব অশান্তিতে দিন কাটাচ্ছিলেন।

আফসানা বেগম ভাত খেয়ে বিছানায় একটু কাত হয়েছিলেন। অসময়ে স্বামীকে। একটা খাম হাতে করে ঘরে ঢুকতে দেখে উঠে বসে এতক্ষণ স্বামীর দিকে চেয়েছিলেন। চিঠি পড়া শেষ করে তাকে পাঞ্জাবীর খুঁটে চোখ মুছতে দেখে আতঙ্কিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কার চিঠি? তােমার চোখে পানি কেন?

হামিদ সাহেব সরাসরি স্ত্রীর কথার উত্তর না দিয়ে ভিজে গলায় বললেন,
জান আবসারের মা, কয়েকদিন ধরে ঝর্ণার কথা বড় মনে পড়ছিল। মেয়েটার কথা চিন্তা করে মনটাও খারাপ হয়েছিল। আল্লাহপাকের দরবারে শুকরিয়া জানাই, তিনি সেই। দুঃশ্চিন্তা থেকে আমাকে রেহাই দিলেন। তারপর তিনি চুপ করে গেলেন।

আফসানা বেগম স্বামীকে চেনেন। ভীষণ রাশ ভারি মানুষ। একটা কথা দ্বিতীয় বার। জিজ্ঞেস করলে রেগে যায়। নিজের ইচ্ছায় কিছু না বললে, একটা কথারও উত্তর দেয়। । স্বামীকে চুপ করে থাকতে দেখে ভাবলেন, আজ হঠাৎ ঝর্ণার কথা বলল কেন? তা হলে এই চিঠি কি সে দিয়েছে?

সে কথা ভেবে আফসানা বেগমের চোখ দুটো পানিতে ভরে উঠল। প্রায় রাত্রে শুয়ে শুয়ে মেয়ের জন্য কাঁদেন। একমাত্র মেয়েকে সেদিন তাড়িয়ে দিতে আফসানা বেগমের স্বামীর উপর প্রচণ্ড অভিমান হয়েছিল। সেই জন্য কোনােদিন তিনি স্বামীকে বা ছেলেদেরকেও ঝর্ণার খোঁজ নিতে বলেন নি। আজ স্বামীর। মুখে মেয়ের কথা শুনে মুখে আঁচল চাপা দিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলেন।

হামিদ সাহেব এতক্ষণ গভীর চিন্তায় মগ্ন ছিলেন। স্ত্রীর কান্নার আওয়াজ শুনে সম্বিত ফিরে পেয়ে বললেন, কাঁদছ কেন? আল্লাহপাকের ইচ্ছায় ঝর্ণা ভালাে আছে। দু'একদিনের মধ্যে স্বামীর সঙ্গে আসছে। তারপর তিনি বারান্দায় এসে চেয়ারে বসে একটা কাজের মেয়েকে দিয়ে তিন ছেলে ও তিন বৌকে ডেকে পাঠালেন। তারপর একজন চাকরকে বললেন, বৈঠকখানা থেকে ছ’সাতটা চেয়ার এখানে নিয়ে এস।

মাত্র কয়েকদিন আগে হামিদ সাহেবের ছােট ছেলে সবুজ স্ত্রী ও এক ছেলে, এক। মেয়ে নিয়ে দেশে বেড়াতে এসেছে। সবুজের স্ত্রী এলিসার বাংলাদেশ দেখার খুব সখ । তাই স্বামীর সঙ্গে এসেছে। এলিসা খুব ভালাে মেয়ে। বিয়ের পর স্বামীর কাছে বাংলা। শিখেছে। বাংলা কিছু কিছু বােঝে এবং ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলতেও পারে। খুব বুদ্ধিমান মেয়ে, এই ক’দিনে বাড়ির সকলের সঙ্গে বেশ এ্যাডজাস্ট করে ফেলেছে।

মারুফ অসুস্থ হয়ে দু’তিন দিন হল রংপুর থেকে বাড়িতে এসেছে। সবাই একে। একে বারান্দায় এসে বসল। আফসানা বেগম আগেই নিজের রুম থেকে স্বামীর পিছনে। পিছনে এসেছেন। সকলে আসার পর হামিদ সাহেব বললেন, আল্লাহ যার তকদিরে যা লিখেছেন তা হবেই। তাকে প্রতিহত করার ক্ষমতা কারাে নেই। ঝর্ণা এ বাড়ির একমাত্র মেয়ে। সে যত বড় অন্যায় করুক না কেন, তার তকদিরে যা ছিল তাই হয়েছে মনে করে তাকে আমাদের ক্ষমার চোখে দেখা উচিত।

সে চিঠি দিয়েছে জামাইকে সঙ্গে নিয়ে দু'একদিনের মধ্যে আসছে। শুনে আফসানা বেগমের চোখে পানি এসে গেল, আঁচলে চোখ মুছে বললেন। চিঠিটা পড়ে শােনাও না।।

হামিদ সাহেব বড় ছেলে আবসারকে চিঠিটা দিয়ে পড়তে বললেন। আবসার চিঠিটা খুলে পড়তে লাগল। আব্বাজান ও আম্মাজান, (আসসালামু আলায়কুম)। আদৰ তসলিমৎ বহুৎ বহুৎ সালাম পাক কদমে পৌছে। ভাইয়াদের ও ভাবিদের সালাম এবং তাদের ছেলেমেয়েদের আন্তরিক দোয়া ও স্নেহাশীষ জানাচ্ছি। বাদ আরজ কাজ প্রায় পাঁচ বছর হতে চলল তােমাদের সবাইয়ের মনে কষ্ট দিয়ে চলে

এসেছিলাম। স্বল্প জ্ঞানের কারণে তখন আমি যে ভুল করেছিলাম, সে জন্যে তােমরা যেমন অশান্তি ভােগ করেছ তেমনি আমিও চরম অশান্তি ভােগ করেছি। আল্লাহপাকের অপার মহিমায় তিনি আমার দিকে করুণার দৃষ্টি দিয়ে কুরআন-হাসিদের জ্ঞান দান করে সেই পথে পরিচালিত করেছেন। সেই সঙ্গে আমাকে আমার অন্যায় কাজের সংশােধন করিয়ে নতুন জীবন দান করে ধন্য করেছেন। সেই জন্যে তাঁর পাক দরবারে হামেশা শুকরিয়া আদায় করছি।

আব্বা, তােমরা জেনে কি মনে করবে জানি না, যাকে বিয়ে করে তােমাদের সকলের মনে কষ্ট দিয়েছি এবং তুমি সে সময় তার সম্বন্ধে যা কিছু বলে গালাগালি করেছিলে, ঢাকায় ফিরে এসে তার সেই সব রূপ দেখলাম। টাকা নিয়ে আসতে পারিনি। বলে প্রথম দিকে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা দিত। তারপর অত্যাচারের উপর অত্যাচার চালিয়ে টাকার ব্যবস্থা করতে বলে। শেষে টাকা রােজগারের জন্য আমার ইজ্জতের উপর। হামলা চালায়।

আমি রাজি না হতে ভীষণ মারধাের করে তাড়িয়ে দেয়। এটাই আমার ভুলের শাস্তি আল্লাহপাক নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। তারপর সেই করুণাসিন্ধু, যার। করুণা সারা বিশ্বে সর্বদা বর্ষিত হচ্ছে, আমার দিকে করুণার দৃষ্টি দান করে তার। রহমতের ছায়ায় নিয়ে নিরাপদ আশ্রয় দিলেন। এক বছর সেই আশ্রয়ে থাকার পর। আল্লাহর এক খাস বান্দার সঙ্গে তাঁরই ইচ্ছায় আমার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। তাকে দেখলে।

তােমরা চিনতে পারবে। তােমাদের কাছে আমার একান্ত অনুরােধ, তােমাদের জামাইকে কোনােরকম অসম্মান করবে না। আমি তার এতটুকু অসম্মান সহ্য করতে পারব না। সম্মান দেখাতে না পারলেও অসম্মান করবে না। শুধু এইটুকু মনে রেখ, ওকে স্বামী হিসাবে পেয়ে আমি এত সুখ শান্তি পেয়েছি, তা তােমাদের বােঝাতে পারব। না। তাই আবার অনুরােধ করছি, তাকে অসম্মান করে আমাকে অশান্তির আগুনে নিক্ষেপ করাে না।

আমরা ইনশাআল্লাহ ... তারিখ নাগাদ রওয়ানা দেব। তােমরা কে কেমন আছ জানি না। আশা করি, আল্লাহপাকের রহমতে ভালাে আছ। আমরাও তাঁরই করুণায় ভালাে আছি। সবশেষে তােমাদের পবিত্র কদমে সালাম জানিয়ে এবং আল্লাহপাকের দরবারে তােমাদের সকলের সহিসালামতের জন্য দোয়া চেয়ে শেষ। করছি। আল্লাহ হাফেজ।

ইতি তােমাদের অবাধ্য মেয়ে ঝর্ণা
চিঠি পড়া শেষ করে আবসার সকলের দিকে তাকিয়ে দেখল, সবাই আব্বার দিকে তাকিয়ে আছে।।
হামিদ সাহেব চোখ বন্ধ করে রয়েছেন। ওনার দু'চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।

সবুজের আমেরিকান বৌ এলিসা শ্বশুরকে উদ্দেশ্য করে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় বলল, আপনি কাঁদছেন কেন? আজ তাে আনন্দের দিন। আমি আপনার ছেলের কাছে ঝর্ণার কথা কিছুটা শুনেছিলাম। এখন তার সমস্ত ঘটনা জেনে বুঝতে পারলাম। সে প্রথম। স্বামীর কাছে অনেক কষ্ট পেয়েছে। এখন দ্বিতীয় স্বামীর কাছে সুখে-শান্তিতে আছে। বর্তমান স্বামীকে আপনারা চেনেন লিখে জানিয়েছে। সে যেই হােক না কেন, ঝর্ণা তাকে পেয়ে যখন সুখী হয়েছে তখন তাকে আমাদের সাদরে গ্রহণ করা উচিত। আমার বিবেক তাই বলে।।

হামিদ সাহেব বিদেশী বৌয়ের কথা শুনে চোখ মুছে বললেন, তুমি ঠিক বলেছ মা। তারপর আল্লাহর শােকর আদায় করে বললেন, আল্লাহপাকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেউ কিছু করতে পারে না। তিনি যা কিছু করেন বান্দাদের মঙ্গলের জন্য করেন। জামাই যেই হােক না কেন, সবাইকে মনে রাখতে হবে সে এ বাড়ির জামাই। তাকে সেরকম সম্মান দেখাতে হবে। একবার ভুল করেছি, তার পুনরাবৃত্তি আর করতে চাই না।

ঝর্ণার ভাইয়েরাও একমাত্র বােনের জন্য এতদিন অশান্তি ভােগ করছিল। তার খবর জেনে খুব খুশী হল। আব্বার কথা শুনে তারাও আল্লাহর শােকর আদায় করে বলল, ঝর্ণাকে ও তার স্বামীকে কোনােরকম অসম্মান করব না।

চিঠি পাওয়ার পরের দিন টেলিগ্রাম পেয়ে হামিদ সাহেব ছেলেদেরকে বললেন, আগামী কাল সন্ধ্যের দিকে ওরা এসে পড়তে পারে। তােমরা এর মধ্যে সমস্ত আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের মানুষকে সংবাদটা জানিয়ে দাওয়াত করে তাদের খাওয়াবার ব্যবস্থা। কর। আমি সবাইয়ের সামনে মেয়ে-জামাই ঘরে তুলব।

গ্রামের মানুষ ও আত্মীয়-স্বজনেরা শুনেছিল, চেয়ারম্যান সাহেবের মেয়ে ঢাকায়। পড়াশােনা করতে করতে প্রেম করে বিয়ে করেছিল বলে তিনি মেেয়র কোনাে খোজখবর রাখেন নি। এখন শুনে তারা বলাবলি করতে লাগল, হাজার হােক একমাত্র মেয়ে, কতদিন আর রাগ করে থাকবেন। ঐদিন চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়িতে দাওয়াত খেতে গ্রামের বহু লােকজন এসেছে। আত্মীয়-স্বজনে ঘর ভরে গেছে।

love story free book

bangla love story free book

সন্ধ্যের পর থেকে খাওয়ান হচ্ছে। এক সময় রাত সাড়ে আটটার দিকে একটা ট্যাক্সী চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়ির সামনে এসে থামতে দেখে ছােট বড় অনেকে গাড়ির চারপাশে ভীড় করে দাড়াল।

ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে পিছনের গেট খুলে দিলে সাইফুল আগে নেমে সবাইকে সালাম দিল। তারপর ঝর্ণা ও নাজনীন নেমে সাইফুলের পাশে দাড়াল। বড়রা সালামের উত্তর দিয়ে অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে রইল। একটা ছেলে ছুটে গিয়ে হামিদ সাহেবকে খবর দিল।

তিনি তখন মসজিদ থেকে এশার নামায। পড়ে ফিরছিরেন। খবরটা শুনে তিনি হন্তদন্ত হয়ে তাদের কাছে এসে সাইফুলের দিকে চেয়ে থমকে দাঁড়িয়ে গেলেন। ততক্ষণে ঝর্ণার ভাইয়েরাও শুনে সেখানে এসেছে। সাইফুল তাদেরকে চিনতে পেরে সালাম দিয়ে কদমবুসি করতে গেলে ঝর্না ও। নাজনীন তাকে অনুসরণ করল।

হামিদ সাহবে অনেক দিন আগে সাইফুলকে দেখেছেন। তিনি স্কুলের সেক্রেটারী । ভালাে ছাত্র হিসাবে তাকে স্নেহ করতেন। ঝর্নাকে চিঠি দিয়েছিল বলে সেই সময়ে তিনি রেগে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরীক্ষা না দিয়ে নিরুদ্দেশ হওয়ার কথা শুনে তার ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা ভেবে মনে একটু দুঃখও পেয়েছিলেন। জামাইকে দেখে

সাইফলের কথা মনে পড়ল। ভাবলেন, জামাই অনেকটা সাইফুলের মতাে দেখতে। সাইফুল কদমবসি করে। দাড়াতে হামিদ সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, তুমি ওসমানের ছেলে সাইফল না? সাইফুল জি বলে লজ্জা পেয়ে মাথা নীচু করে নিল ।।

হামিদ সাহেব তাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমাে খেয়ে বললেন, এতে লজ্জা পাওয়ার। কি আছে। আমাদের গ্রামের একজন সামান্য লােকের ছেলে হয়ে আল্লাহপাকের ইচ্ছায়।

নিজের চেষ্টায় এত বড় হয়েছ, এটা তাে গর্বের কথা।
দেশের ছেলেদের উচিত তােমার আদর্শ অনুসরণ করা। তারপর ঝর্না কদমবুসি করতে তাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমাে খেয়ে বললেন, তােদেরকে পেয়ে আমার যে কত আনন্দ হচ্ছে তা আল্লাহপাক জানেন। সেদিন রাগের মাথায় তােকে যা তা বলেছিলাম, সে সব মাফ করে দিয়েছিস তাে?।

ঝর্না ছলছল নয়নে তাড়াতাড়ি বলে উঠল, আব্বা, একি কথা বলছ? ছেলেমেয়ে দোষ করলে বাপ-মা তাে রাগারাগি করবেই। আমি বরং সেদিন তােমার কথার অবাধ্য হয়ে অন্যায় করেছি। সেজন্য সকলের কাছে মাফ চাইছি। নাজনীন ওনাকে সালাম। করতে ঝর্না বলল, আমার বড় ননদের মেয়ে। হামিদ সাহেব তার মাথায় হাত বুলিয়ে চুমাে খেয়ে দোয়া করলেন।

তারপর ছেলেদেরকে বললেন, তােমরা দাড়িয়ে রয়েছ কেন? এদেরকে ঘরে নিয়ে। যও। ভিতরে এসে মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন, তাের শ্বশুর-শাশুড়ী কেমন আছে? ঝর্ণা বলল, আমার বিয়ের আগে ওনারা মারা গেছেন।

হামিদ সাহেব ইন্না নিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন’ পড়ে বললেন, আল্লাহ তাদের রুহের মাগফেরাত দান করুক। তাের শ্বশুর খুব সৎ ও ধার্মিক লােক ছিল। গ্রামের লােকজন ওসমানের ছেলের অবস্থা দেখে অবাক হয়ে গেল।

নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল, একেই বলে ভাগ্য। আল্লাহ কার ভাগ্যে কি রেখেছে, তা কেউ বলতে পারে না। পরের দিন গ্রামময় রাষ্ট্র হয়ে গেল, ওসমানের ছেলে খুব বড়লােক হয়ে চেয়ারম্যানের মেয়েকে বিয়ে করে দেশে ফিরেছে। অনেকে সাইফুলকে এক নজর। দেখার জন্য হামিদ সাহেবের বাড়িতে ভীড় করতে লাগল। সাইফুল ছােট-বড়, গরিবধনী সকলের সঙ্গে হাসিমুখে আলাপ করে বিদায় দিল।

এদিকে ঝর্নার সঙ্গে তার ভাবি এলিসার খুব ভাব হয়ে গেল। এলিসা ঝর্ণাকে জিজ্ঞেস করে তার সব ঘটনা শুনে বলল, তুমি খুব ভাগ্যবতী। কোনাে ছেলে কোনাে মেয়েকে সাইফুল ভাইয়ের মতাে ভালবাসতে কখনাে শুনি নি ও দেখি নি।

সাইফুল ঘুরে ঘুরে গ্রামের সকলের সঙ্গে দেখা করে তাদের খোঁজ-খবর নিতে লাগল। এক সকালে বন্ধু মােরসেদের বাড়িতে গিয়ে সালাম ও কুশলাদি বিনিময় করল । মােরসেদ বলল, আমি গতকাল রংপুরে গিয়েছিলাম। আজ ফিরে তাের কথা শুনেছি।

বিকেলে তাের সাথে দেখা করতে যাব ভাবছিলাম। তা তুই একা এলি যে? তাের বৌ কোথায়? সাইফুল বলল, মসজিদ থেকে ফজরের নামায পড়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম। অন্য একদিন নিয়ে আসব।

মােরসেদ ফুপাতাে বােন নাফিজাকে বিয়ে করেছে। সে পুকুরঘাটে হাঁড়ী বাসন মাজতে গিয়েছিল। ফিরে এসে খরব পেয়ে তাদের কাছে এসে সালাম দিয়ে বলল, সাইফুল ভাই, কেমন আছেন? একা কেন? ভাবি কই? নাফিজাকে সাইফুল স্কুলে পড়ার সময় থেকে মােরসেদের ফুপাতাে বােন হিসাবে চেনে। সাইফুল ও মােরসেদ যখন ক্লাস টেনে তখন নাফিজা সেভেনে পড়ত।

সালামের জবাব দিয়ে সাইফুল বলল, আল্লাহর রহমতে ভালাে আছি। তারপর তাদের সঙ্গে গল্প করে, নাস্তা খেয়ে সাইফুল ফিরে এল ।। ঝর্ণা স্বামীর অপেক্ষায় এখনাে নাস্তা খাই নি। বেলা দশটার সময় সাইফুল ফিরে এলে বলল, এত বেলা পর্যন্ত না খেয়ে থাকলে অসুখ করবে তাে। তােমার জন্য আমার এখনাে খাওয়া হয় নি।

সাইফুল অনুতপ্ত সুরে বলল, আমার ভুল হয়ে গেছে। তুমি নাস্তা খেয়ে নাও। আমি মােরসেদের বাড়িতে খেয়ে এসেছি। খেয়ে এসে ঝর্ণা বলল, সকলের সঙ্গে যে দেখা করে বেড়াচ্ছ, আসবার সময় বুবু। কি বলে দিয়েছিল মনে নেই বুঝি? আছে, আজ বিকেলে যাব। আমিও তােমার সঙ্গে যাব। শ্বশুর বাড়ি দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। বেশ তাে যাবে। আমি কি ভেবেছি জান?

বললে জানব কি করে? ভেবেছি, এবার এখানে একটা বাড়ি কর। পুকুর কাটার। পুকুরের পাড়ে নানা রকম ফলের গাছ লাগাব। আমরা প্রতি বছর আম, কাঁঠাল খেতে আসব । বেড়ানও হবে। আর ফল পাকড় খাওয়াও হবে।।

ঝর্ণা হেসে উঠে বলল, তােমার কথা শুনে একটা প্রবাদ বাক্য মনে পড়ল- বিবি বাড়তে বাড়তে মিয়া খতম। প্ল্যানটা এখনও তােমার মনে। আর বলছ কিনা প্রতি বছর। ফল পাকড় খেতে আসবে।।

মিয়া খতমের ব্যাপারটা আল্লাহর হাতে। বিবি বাড়তে বাড়তে মিয়া বেঁচে। থাকতেও পারে। তবে হয়তাে বুড়াে হয়ে যাবে। আর বুড়ােরা যে কচি জিনিস খেতে। ভালবাসে, সে কথা তুমি বােধ হয় জান না। মানুষ যত বুড়াে হয় তাদের মনটা তত কচি হয়। আমরা যদি মরেও যাই, আমাদের ছেলেমেয়েরা তাে খেতে পারবে। আর । আল্লাহ যদি হায়াতে রাখেন তখন বুড়াে হয়ে গেলেও কচি মনে খেয়ে আনন্দ পাব।

আমি এমনি কথাটা বলেছি। আসলে তােমার প্লানটা খুব ভালাে।
বিকেলে সাইফুল ঝর্ণাকে নিয়ে তাদের বাড়িতে রওয়ানা দিল। নাজনীনেরও। যাওয়ার কথা। দুপুর থেকে তার জ্বর। তাই যেতে পারল না। সে মামাকে বলল, আমাকে নিয়ে অন্য একদিন যেতে হবে কিন্তু।

সাইফুল বলল, তুই ভালাে হয়ে গেলে নিয়ে যাব। | গাড়ির রাস্তা নেই বলে ওরা হেঁটে চলল। হাঁটতে হাঁটতে ঝর্ণার ছেলেবেলার। অনেক কথা মনে পড়তে লাগল। ঐ সময়ে এদিকে এসেছিল কিনা তার মনে নেই। সাইফুলের বাড়ির কাছাকাছি এসে ঝর্ণা দেখতে পেল, টিনের চালের দু’কামরা বেড়ার ঘর।

সামনে বেশ অনেকখানি উঠোন। উঠোনের চারদিকে নানারকম ফলের গাছ। একপাশে একটা গাভী ঘাস খাচ্ছে। তার আদলা বাছুরটা বাটে মুখ দিয়ে দুধ খেতে খেতে মাঝে মাঝে গুতাে দিচ্ছে। এক পাশে হাঁস-মুরগী থাকার খোয়াড়। একটা শ্যামলা রঙের তরুণী উঠোন ঝাট দিচ্ছে।

উঠোনে এসে সাইফুল তরুণীটিকে বলল, তুই তারানা না?
তারানা আগের থেকে দেখতে পেয়ে ঝট দেয়া বন্ধ করে তাদের দিকে তাকিয়েছিল। সাইফুলকে চিনতে পেরে বলল, সাইফুল ভাই আপনি? তারপর ঝর্ণাকে দেখিয়ে বলল, নিশ্চয় ভাবি? সাইফুল বলল, বুঝতেই যখন পেরেছিস তখন বরণ করে ঘরে তলবি তাে। নতুন বাে শশুর বাড়ি এল, তুই ননদ হয়ে যদি কিছু না করিস, তবে কে করবে? চাচি কোথায়? | তারানা ঝাটাটা একপাশে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে এগিয়ে এসে দু’জনকে কদমবুসি। করল। তারপর ঝর্ণার একটা হাত ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় বলল, আম্মা পাশের বাড়িতে গেছে। সাইফুল বলল, চাচা এখনও মাঠ থেকে ফেরে নি?

আজ শরীর খারাপ বলে মাঠে যাই নি। একটু আগে পাগারের জমিটা দেখতে গেল। ঘরে এনে চৌকির উপর তাদের বসতে বলে বলল, তােমরা বস, আমি আম্মাকে ডেকে আনি। তারানা চলে যেতে ঝর্ণা ঘরের চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল, এরা কারা? সাইফুল বলল, তারানার আব্বা জহুর আমার চাচা আব্বার দূর সম্পর্কের ভাই। উপর ঘর দুয়ার দেখার দায়িত্ব এবং জমি-জায়গা ভাগ ঢাকায় যাওয়ার সময় এদের উপর ঘর দুয়ার দেখার দায়িত্ব এবং জ চাষে দিয়ে যায়।

তখন তারানা আরাে ছােট ছিল। তারানার মা সেতারা বানু স্বামীর মুখে সাইফুল ও ঝর্নার কথা জেনেছে। এখন মেয়ের মুখে তাদের আসার কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে এসে তাদের ভালাে-মন্দ জিজ্ঞেস করল। তারপর ঝর্ণার গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে চুমাে খেয়ে বলল, বেচে থাক মা, সুখী হও। তােমরা গল্প কর, আমি তােমাদের জন্য নাস্তা করি।

সাইফুল বলল, আমরা নাস্তা খেয়ে বেরিয়েছি, ওসব কিছু লাগবে না, তারানা। কোথায় গেল? সিতারা বানু বলল, সে তােমার চাচাকে ডাকতে গেছে।

একটু পরে তারানা আব্বার সঙ্গে ফিরে ঝর্ণাকে পাশের রুমে নিয়ে এসে গল্প করতে লাগল। জহুরকে দেখে সাইফুল সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করল, চাচা কেমন আছেন? জহুর সালামের উত্তর দিয়ে বলল, আল্লাহ এক রকম রেখেছে বাবা। তা তােমাদের সব খবর ভালাে? তােমার বাপ-মা সেই যে ঢাকায় গেল আর ফিরল না। আল্লাহ তাদেরকে তুলে নিল। কান্নায় তার গলা বুজে এল। জামার হাতায় চোখ মুছে বলল, মনিরা, নাজনীন কেমন আছে? ওরা এল না কেন?

বুবু পরে আসবে। নাজনীন এসেছে। আজ দুপুর থেকে জ্বর; তাই আসতে পারল । আসার সময় বুবু বলে দিয়েছিল দু’তিন বছরের আমাদের কত কি পাওনা হিসাব। করে নিয়ে যেতে। কিভাবে তা দেবেন বলুন?

| জহুর বলল, তুমি যেভাবে নিতে চাইবে, সেইভাবে দেব। তবে এখন হয়তাে। পুরােটা দিতে পারব না। অভাবের সংসারে কিছু খেয়ে ফেলেছি। তােমরা যদি প্রতি বছর আসতে তা হলে এরকম হত না।
সাইফুল বলল, যেটা খেয়ে ফেলেছেন সেটা আর দিতে হবে না। তবে এবার। থেকে সব ঠিকঠাক রাখবেন। কিছুদিন পর আমি বুবুকে নিয়ে আসব, তখন নেব।।

এখানে একটা বাড়ি করার ইচ্ছা করেছি।
একটা পুকুরও কাটাব। আপনারা আবার দুঃশ্চিন্তা করবেন না। আপনাদেরকে এখান থেকে চলে যেতে বলব না। আপনারাই ঐ বাড়িতে থেকে দেখাশােনা করবেন। আমরা মাঝে মাঝে এসে বেড়িয়ে যাব।

সাইফুলের আব্বা ওসমান ক্ষেতে-খামারে কাজ করলে কি হবে, সৎ ও ধার্মিক ছিল। বলে গ্রামের প্রায় সকলে তাকে ভক্তি শ্রদ্ধা করত, জহুরও করত। সাইফুলের কথা শুনে আবার তার চোখ দুটো পানিতে ভরে উঠল। বলল, তােমার আব্বা ও আম্মার মতাে লােক এযুগে খুব কম দেখা যায়। আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতি করুক। তুমিও তােমার বাপের মতাে হয়েছ। তােমাকে আল্লাহ বড় করেছে, আরাে করুক। তােমাদেরকে সুখী করুক।

সিতারা বানু সরু চাকলি করে দুধ চিনিতে ভিজিয়ে মেয়েকে ডেকে বললেন, কিরে শুধু গল্প করবি নাস্তা খাওয়াবি না? তারানা বলল নাস্তা তৈরি করতে তােমারই তাে দেরি হল । দাও নিয়ে যাই।।

নাস্তা খেয়ে আসরের নামায পড়ে সাইফুল ঝর্ণাকে নিয়ে তিস্তা নদীর পাড়ে হাঁটতে হাটতে একটা বট গাছের তলায় বসল। কিছুক্ষণ নদীর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, জান ঝর্ণা; স্কুলে পড়ার সময় এই জায়গাটা আমার খুব প্রিয় ছিল। প্রতিদিন বিকেলে। এখানে বসে সন্ধ্যে পর্যন্ত প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতাম, আর তােমার কথা ভাবতাম।। তুমি কবে থেকে আমার কথা ভাবতে?

স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম যেদিন ক্লাসে গেলাম, সেদিন তােমাকে দেখে আমার খুব ভালাে লাগল। তারপর তােমার পরিচয় পেয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু মনকে মানাতে পারি নি। তাই তােমার দিকে যখন তখন করে তাকিয়ে থাকতাম। মাঝে। মাঝে তােমার চোখে চোখ পড়ে গেলে তুমি রাগে মুখ ফিরিয়ে নিতে।। তােমাকে দেখলেই আমি রেগে যেতাম এবং আমার ঘৃণা হত, একথা জানার পরও ঐভাবে চিঠি দিলে কেন? তখন তােমার ভয় করে নি?

প্রথম দিকে ভালবাসা-টালবাসা তাে বুঝতাম না। ছােটবেলা থেকে আমি সুন্দর। জিনিষ খুব ভালবাসি। তাই তােমাকে খুব সুন্দরী দেখে শুধু দেখতাম। নাইনে উঠার পর। তােমাকে ভালবেসে ফেললাম। তখন মনে হত তােমাকে ছাড়া অন্য কোনাে মেয়েকে বিয়ে করতে পারব না। সে সময়ে ভয়ে তােমাকে কিছু জানাতে পারি নি।

তারপর টেস্ট পরীক্ষার পর তােমাকে আর দেখতে পাব না মনে করে ভালবাসার কথা জানাবার জন্য আমার মন পাগল হয়ে উঠেছিল। আর একটা কথা মনে হয়েছিল, আমি তােমাকে ভালবাসি জানার পর তুমি হয়ত একটু নরম হবে। তাই সাহস করে চিঠি দিয়েছিলাম।

story free book

love story free book

হেডস্যারের হাতে মার খাওয়ার পর আমার ওপর তােমার রাগ হয় নি? অথবা আমার প্রতি তােমার ভালবাসা ছুটে যায় নি? যদি তাই হত, তা হলে তােমাকে কি আজ পেতাম?

ঝর্ণা অশ্রুভরা চোখে বলল, সেসব কথা মনে হলে আমি মরমে মরে যাই। আমার মনের মধ্যে যে কি রকম অনুশােচনা ও কষ্ট হচ্ছে তা আল্লাহকে মালুম। চোখ মুছে আবার বলল, সেসবের জন্যে তুমি যদি কিছু শাস্তি দিতে, তা হলে হয়ত কিছুটা শান্তি পেতাম।।
আমি শাস্তি দেয়ার আগেই তাে কাদছ। শাস্তি দিলে কি করবে তা হলে? তােমার। কোনাে ব্যবহারই আমার মনে প্রতিহিংসা জাগাতে পারে নি। কারণ আমি আমার

ভাগ্যকে সব সময় মেনে নিয়ে সবর করে থাকি। তাই আল্লাহ সেই সবরের ফলস্বরূপ চিরকাঙ্ক্ষিত ঝর্ণাকে দান করে আমাকে ন্য করেছেন। পরে তুমিও তােমার ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে আমাকে পাওয়ার জন্য সবর করেছিলে। তাই তিনি তােমারও মনের আশা পূরণ করেছেন। একটা কথা জেনে নাও, সবরের গাছ খুব তীতা আর ফল খুব মিষ্টি। আমরা সবর করার দরুন তিনি আমাদের মনের আশা পূর্ণ। করেছেন। সেজন্যে আমরা চিরকাল তার শােকর গােজার করতে থাকব। খুব খাঁটি কথা বলেছ। এবার চল মাগরিবের নামাযের সময় হয়ে আসছে।

ঝর্ণার ভাবিরা ননদের পেটে বাচ্চা আছে জানতে পেরে মহা খুশী। তারা শাশুড়ীকে সে কথা বলতে আফসানা বেগম আনন্দে আত্মহারা হয়ে স্বামীকে জানালেন। হামিদ সাহেব শুনে শােকর আলহামদুলিল্লাহ বলে হাসি মুখে বললেন, ওকে দেখে। আমি সেই রকমই অনুমান করেছিলাম। আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে। আফসানা বেগম বললেন, শুধু আনন্দ পেলে চলবে? মেয়ে জামাইকে একদিন ভালাে করে খাওয়াতে হবে। হামিদ সাহেব বললেন, ওরা কি রােজ খারাপ খাচ্ছে?

আফসানা বেগম হেসে উঠে বললেন, তুমি অত জ্ঞানীলােক হয়ে আমার এই সামান্য কথা বুঝতে পারলে না। মেয়েদের পেটে প্রথম বাচ্চা এলে তাকে নানারকম পিঠে-পাঠা ও ভালাে-মন্দ জিনিস করে খাওয়াতে হয়, বুঝেছ?
হামিদ সাহেবও হেসে উঠে বললেন, আবসার যখন তােমার পেটে ছিল তখন তােমার আব্বা-আম্মা বুঝি তাই করে খাইয়েছিলেন? আফসানা বেগম কপট রাগ দেখিয়ে বললেন, খাইয়েছিলেন বইকি। ফিরে আসার সময় আমাদেরকে নতুন জামা-কাপড়ও পরিয়ে বিদায় করেছিলেন। তুমি সেসব ভুলে গেলে কি করে? আমাদেরকে এখন সেইসব করতে হবে।

হামিদ সাহেব বললেন, ওসব মেয়েদের ব্যাপার, আমাদের মনে থাকে না। যা করার তাই কর। তােমাকে নিষেধ করেছে কে? আফসানা বেগম বললেন, তাতাে করবই।
পনের দিন পর ওরা ঢাকায় ফিরে এল। ঢাকায় ফেরার কয়েকদিন পর একদিন বেশ রাত করে সাইফুল বাসায় ফিরলে ঝর্ণা জিজ্ঞেস করল, আজ এত দেরি হল যে?। আজ অফিসে একটা পার্টি দিয়েছিলাম, সেই জন্য দেরি হল।

পার্টির কথা শুনে ঝর্ণার আমিনের পার্টির কথা মনে পড়ল। ভাবল, সে রকম পার্টি। নয় তাে? মনে হচ্ছে কিছু যেন ভাবছ? পার্টিতে মেয়ে মানুষ থাকে তাই না?
সাইফুল হেসে উঠে বলল, মদ, মেয়ে মানুষ না হলে পার্টিই হয় না। এটা পার্টির । প্রধান উপকরণ। হঠাৎ একথা জিজ্ঞেস করলে কেন?

পাটির কথা মনে হলে, প্রচণ্ড ঘৃণা ও ভয় হয়। আমাকে কি তুমি অবিশ্বাস কর? |
ঝর্ণা স্বামীকে জড়িয়ে ধরে ভিজে গলায় বলল, তােমাকে অবিশ্বাস করার আগে। যেন আমার মৃত্যু হয়।
সাইফুল তার পিঠে আদরের চপেটাঘাত করে বলল, এরকম কথা বলতে নিষেধ করেছি না। তারপর তাকে খাটে বসিয়ে বলল, প্রথম ব্যবসায় নেমে পাটিতে মদ ও মেয়ে মানুষের দিকে কোনাে নজর দিই নি। তােমার বিয়ের পর মদের দিকে ঝুঁকে পড়লেও তােমার স্মৃতি মেয়ে মানুষের নেশা থেকে রক্ষা করেছে।

আর এখন তােমাকে পেয়ে মদও ছেড়েছি। এর ফলে তােমার ব্যবসায় ক্ষতি হয় না? আমি তাে জানি ব্যবসায় বড় বড় অর্ডার আদায়ের জন্য ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্ত্রীকে ডানাকাটা পরীর মতাে সাজিয়ে হত্তাকত্তাদের মন জুগিয়ে কাজ হাসিল করে।।

তােমার জানাকে অস্বীকার করব না। আজকাল শতকরা নিরানব্বই জন ব্যবসায়ী তাই করে। তারা এই জন্য করে, তাদের কাছে ধর্মের চেয়ে টাকাটা বড়। আমিও প্রথম প্রথম মেয়ে মানুষ ভাড়া করে এনে লাভারের ভূমিকায় অভিনয় করে কাজ হাসিল। করেছি।

এখন পার্টি করলেও মদ ও মেয়েমানুষ বাদ দিয়ে করছি। তােমার সান্নিধ্যে এসে আল্লাহ আমাকে জানিয়েছেন, টাকার চেয়ে ধর্ম বড়।' সেইজন্যে মনে হয়, আল্লাহ মদ ও মেয়ে মানুষ ছাড়াই আমার কাজ হাসিল করিয়ে দিচ্ছেন। তাই পাটি শেষে মসজিদে এশার নামাযের দু'রাকাত শােকরানার নামায পড়ে এলাম।

ঝর্ণা শােকর আলহামদুলিল্লাহ বলে স্বামীর দুটো হাত ধরে বলল, তােমাকে পার্টির ঐ সব কথা জিজ্ঞেস করে অন্যায় করে ফেলেছি। মাফ করে দাও। সাইফুল দুষ্টুমী করে বলল, যদি না করি? তা হলে পায়ে ধরে কাদব। . আগে তাই করে দেখাও, তারপর চিন্তা করব।

ঝর্ণা তার হাত ছেড়ে দিয়ে বসে তার পায়ে হাত দিতে গেলে সাইফুল তাকে ধরে বুকে জড়িয়ে বলল, যাও, মাফ করে দিলাম। তারপর বলল, তােমার কোনাে অন্যায়। হয় নি। আমি তােমার সঙ্গে একটু জোক করছিলাম। তােমার পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে যে জিজ্ঞেস করেছ, তা আমি বুঝতে পেরেছি। তা ছাড়া তােমার কথা তাে মিথ্যে না। এখন চল খেতে দেবে। খিদে পেয়েছে।

ওমা, পার্টি থেকে এসে খেতে চাচ্ছ, সেখানে কিছু খাওনি? খেয়েছি, তবে সামান্য। কেন?
তােমার সঙ্গে না খেলে আমার তৃপ্তি হয় না। তা ছাড়া আমি না খেলে, তুমি না খেয়ে থাকবে যে ।
আবার অন্যায় করে ফেললাম, মাফ করে দাও। বারবার তুমি অন্যায় করলে মাফ করতে পারব না। শাস্তি পেতে হবে।।

bangla love story free book

love story books bangla

শাস্তি যা ইচ্ছা দাও, তবু মাফ চাই।
তা হলে আমাকে একটু আদর সােহাগ কর। ঝর্ণা স্বামীকে জড়িয়ে আদর সােহাগ করে অস্থির করে তুলল। সাইফুল ঝর্নার আদর সােহাগে উত্তেজিত হয়ে তাকে পাজাকোলা করে চুমাে খেতে। খেতে বলল, তােমাকে নিয়ে বিছানা ...।

ঝর্ণা তাকে কথাটা শেষ করতে দিল না। তার মুখে হাত চাপা দিয়ে মেকী চোখ রাঙ্গিয়ে বলল, ভালাে হবে না বলছি। তাকে খাটে শােয়ার প্রস্তুতি নিতে দেখে কাকুতিমিনতি করে বল, প্লীজ এখন ছেড়ে দাও। তুমি এসেছ সাবুর মা-জানে। সে হয়তাে বুবু ও নাজনীনকে খবরটা দিয়ে ডাইনিং টেবিল রেডী করে ফেলেছে। দেরি হলে সাবুর মাকে বুবু ডাকতে পাঠাবে। সময় তাে পালিয়ে যাচ্ছে না।

সাইফুল তাকে ছেড়ে দিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করার সময় বলল, তােমার বুদ্ধির তারিফ করতে হয়। ঝর্ণা স্বামীকে লুংগি দিয়ে তার জামাকাপড় ব্যাকেটে রাখার সময় বলল, মনে কিছু করলে? করেছি। তবে তুমি যদি পালিয়ে যাওয়া সময়টা ধরে এনে আমার কাছে ধরা দাও, তা হলে মনে কিছু করব না।।

হয়েছে হয়েছে, অত ন্যাকামু করতে হবে না। কখনাে ধরা দিতে আপত্তি করেছি? তা অবশ্য করনি, তবে এখন পেটে বাচ্চা তাে, তাই যদি শরীরে না কুলােয়। তােমার কি মুখে কোন লাইসেন্স ট্যাক্স নেই? একদিন ছিল। তােমাকে বিয়ে করার পর আল্লাহ সে সব মওকুফ করে দিয়েছেন। আচ্ছা, কি লােক তুমি বল তাে? কেন? ঝর্ণার স্বামী। ঝর্ণা স্বামীর কোমর জড়িয়ে বলল, আর দুষ্টুমী নয়, খেতে চল, দেরি হয়ে যাচ্ছে। সাইফুলও স্ত্রীর কোমর জড়িয়ে বলল, চল।।

সেরাতে আমিন ঝর্ণাকে মারার পর পার্টিতে গিয়ে সাহেবকে মিথ্যে করে বলল, গতকাল থেকে আমার স্ত্রী খুব অসুস্থ তাই আসতে পারে নি। | আজিজ সাহেব শুনে খুব রেগে গেলেন। কিন্তু লােকজনের সামনে বাইরে তা । প্রকাশ করলেন না। বুঝতে পারলেন, মেয়েটা জেনেশুনে ইচ্ছা করে অসুস্থতার অজুহাত।

দেখিয়ে এল না। ভেবে রাখলেন, দেখবাে কতদিন অজুহাত দেখিয়ে আমাকে ফাকি দিতে পারে। আমিন মদে চুর হয়ে বাসায় ফিরল।।
শায়লা বেগম ছেলেকে কোনাে দিন মদ খেয়ে বাসায় ফিরতে দেখেন নি। আজ দেখে খারাপ লাগলেও কিছু বললেন না। ভাবলেন, যাওয়ার সময় বৌটাকে মারধাের। করে গেছে, মন খারাপ, তাই হয়তাে মদ খেয়ে এসেছে।

আমিন রুমে এসে নিজের খাটে ঘুমিয়ে পড়ল। তার তখন কোনাে দিকে খেয়াল। করার মতাে অবস্থা ছিল না।
শায়লা বেগম বৌ যে চলে গেছে, সে কথা প্রথম জানতে পারেন নি। মনে করেছিলেন, মার খেয়ে হয়তাে রাগ করে ঘুমিয়ে পড়েছে। খাওয়ার সময় কাজের মেয়েকে বললেন, আমিন আজ বাইরে খেয়ে আসবে। তুমি বৌমার ভাত তার ঘরে দিয়ে এস।

কাজের মেয়ে ভাত নিয়ে গিয়ে ঝর্ণাকে দেখতে না পেয়ে টেবিলের উপর চাপা দিয়ে রেখে এসে বলল, আপাকে তাে ঘরে দেখলাম না।
শায়লা বেগম চিন্তিত হয়ে ছেলের রুমে এসে দেখলেন, আজ বৌ যে শাড়িটা পরেছিল, সেটা খাটের উপর জমা করা রয়েছে।

ভাবলেন, তা হলে কি বাে চলে গেছে? না কোনাে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে? তাড়াতাড়ি বাথরুম খুলে দেখলেন, নেই। কাজের মেয়েকে সব বাথরুম খুলে দেখতে বললেন। ছােট ছেলেদের জিজ্ঞেস করলেন। তারা বলল, আমরা জানি না। কাজের মেয়ে ফিরে এসে বলল, কোথাও নেই। শায়লা বেগম। ভাবলেন, নিশ্চয় চলে গেছে।

আমিন ফিরলে তাকে কথাটা বলার জন্যে এত রাত জেগে ছিলেন। ছেলের অবস্থা দেখে আর বললেন না। সকালে ঘুম থেকে জেগে আমিনের গত রাতের সব ঘটনা মনে পড়ল। স্ত্রীর খাটের দিকে তাকিয়ে শাড়িটা দেখে মনে সন্দেহ হল। তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে মাকে ডাকতে ডাকতে তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, তােমার বৌ কোথায়?
| শায়লা বেগম বললেন, তুই চলে যাওয়ার পর বৌ ঘরেই ছিল। তারপর আর বার। হয় নি। রাতে খাওয়ার সময় খোঁজ নিয়ে দেখি নেই। কত খোঁজাখুঁজি করলাম, পেলাম । মনে হয় চলে গেছে।

আমিন ক্রুদ্ধ বাঘের মতাে গর্জন করে উঠল, তােমরা এতলােক থাকতে সে চলে গেল, তােমরা জানলে না?
শায়লা বেগম বললেন, আমরা যে যার রুমে রয়েছি। কে কখন কোথায় যাচ্ছে, জানব কি করে?

আমিন মাকে আর কিছু বলল না। নিজের রুমে আসার সময় গজ গজ করে বলল, যাবে কোথায়? যেখানেই যাক না কেন খুঁজে বের করবই। রুমে এসে বসে বেশ কিছুক্ষণ ভাবতে লাগল, কার কাছে যেতে পারে? ঝর্ণা যে সত্যি সত্যি চলে যাবে, এটা সে ভাবতেই পারছে না। এক এক করে তার বান্ধবীদের কথা মনে করতে লাগল। বাব- মার কাছে যে যাবে না, সে কথা নিশ্চিত। আর যদি গিয়েও থাকে, তা হলে তাে। খুব ভালই হবে। মাস খানে পরে গিয়ে পরিচয় দিয়ে তাদেরকে বলবে, আপনাদের।

ময়ে রাগ করে চলে এসেছে। তাকে নিয়ে যেতে এসেছি।
আবার ভাবল, ঝর্ণা যদি তার অত্যাচারের কথা বাবা-মা ও ভাইয়েদেরকে বলে দেয়, তা হলে তাে বিপদ? কিন্তু না বলে তাে ঝর্ণাকে হাতছাড়া করা চলবে না। যেখানেই যাক না কেন ছলচাতরি করে লকে চেয়ে বুঝিয়ে সুজিয়ে আনতেই হবে। নচেৎ ব্যবসারও যেমন ক্ষতি হবে তেমনি ভবিষ্যতে তার বাবা ও ভাইদের কাছ থেকে কিছুই আদায় করতে পারবে না। কাল

বটা একটু বেশি হয়ে গিয়েছিল। তাই হয়তাে রাগ করে কোনাে বান্ধবীর বাসায় চলে গেছে। দু'চার দিন পর রাগ পড়লে ফিরে আসবে। কিন্তু এক এক করে চার-পাঁচ মাস পরেও যখন ঝর্ণা ফিরল না তখন আমিন একজন লােককে তাদের দেশের বাড়িতে পাঠিয়ে খবর নিল সেখানে যায় নি।

তারপর ঝর্ণার বান্ধবীদের অনেকের কাছে খোজ নিয়ে কোনাে খবর পেল না। শেষে মাস ছয়েক পরে উকিলের ডির্ভোসের চিঠি পেয়ে বুঝল, সে ঢাকাতেই আছে। ডিভাের্সের দিন কোর্টে আমিন ঝর্ণার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করল। কিন্তু সফল হতে পারল না । কোর্ট থেকে ফিরে সে দু’টো গুণ্ডার সঙ্গে কন্ট্যাক্ট করল ঝর্ণাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে আসার জন্য।
 

গুণ্ডারা খোজ নিয়ে দেখল, খুব জাদরেল লােকের আশ্রয়ে ঝর্ণা থাকে। আমিন গুণ্ডা দ’টোকে ঝর্ণার ফটো দিয়েছিল। ঝর্ণা বাইরে বেরােবার সময় বােরখা পরে বের হয়। সেই জন্যে তারা ঝর্ণাকে চিনতে পারে না।

বছর খানেক পর আমিন জানতে পারল, ঝর্ণা যাকে কামলার ছেলে বলে ঘৃণা। করতাে, সে এখন বড় ব্যবসায়ী এবং ঝর্না তাকেই বিয়ে করেছে। জানার পর তার মাথা গরম হয়ে গেল। গুণ্ডাদেরকে সাইফুলের বাসার ঠিকানা দিয়ে বলল, সাইফুলকে মার্ডার। করে হলেও তােমরা ঝর্ণাকে আমার কাছে এনে দাও। তাতে যদি তােমাদের সঙ্গে যা। কন্ট্যাক্ট হয়েছে তার দ্বিগুণ টাকা লাগে দেব।।

গুণ্ডারা উঠে পড়ে লাগল । কিন্তু তারা শত চেষ্টা করেও সুযােগ সুবিধে করে উঠতে পারল না। তবু তারা হতাশ না হয়ে সুযােগের অপেক্ষায় রইল, ঝর্ণাকে কিডন্যাপ করার | আমিন গুণ্ডাদের কাছ থেকে সব খবর রাখছে। নিজেও লােক দিয়ে সাইফুলের অফিস থেকে তাদের অবস্থানের খবর নিয়ে গুণ্ডাদের জানাচ্ছে। বিদেশ থেকে ফেরার পর সাইফুল । অফিসে আজ পার্টি দিচ্ছে জানতে পেরে আমিন গুণ্ডাদের সেই কথা জানাল।

গুণ্ডারা সারাদিন সাইফুলের বাসার দিকে লক্ষ্য রাখল। সাইফুল পার্টি থেকে ফেরার। পর তারা গেটে এসে ছল চাতুরী করে দারােয়ানকে গেট খােলাল। ঢুকেই একজন। দারােয়ানের কানের গােড়ায় জুড়াের চাপ মেরে অজ্ঞান করে ফেলল। তারপর প্যান্টের। পকেট থেকে লাইলনের রশি বের করে হাত-পা বেঁধে গেটের আড়ালে শুইয়ে রাখল। তার মুখটা একটা বড় রুমাল দিয়ে বাধতে ভুলল না। দারােয়ানকে রেখে তারা। বারান্দায় এসে কলিং বেলে চাপ দিল।

একজন বয়স্ক চাকর একটু আগে সাহেবকে দরজা খুলে দিয়েছে। সাহেব ঢােকার পর। দরজা বন্ধ করে নিজের রুমে এসে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে গেল। সে দরজার পাশের রুমে থাকে । তার কাজই হল, দরজা খােলা এবং বন্ধ করা। সেই জন্যে সে সাহেবের অপেক্ষায়। জেগে বসে ছিল। আবার বেল বাজতে শুনে বিরক্ত হয়ে ভাবল, এতরাতে আবার কে এল?

যেই সে দরজা খুলেছে অমনি গুণ্ডা দুটো একসঙ্গে তাকে আক্রমণ করে অজ্ঞান করে দারােয়ানের মতাে বেধে ফেলল। তারপর তাকে তার রুমে বন্ধ করে ভিতর বারান্দায়। দুটো থামের আড়ালে দু’জনে আত্মগােপন করে সুযােগের অপেক্ষায় রইল।

ঝর্ণা ও সাইফুল যখন কোমর ধরাধরি করে রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দা দিয়ে ডাইনিং রুমের দিকে যাচ্ছিল তখন গুণ্ডাদের একজন থামের আড়াল থেকে বেরিয়ে তাদের দিকে পিস্তল তাক করে বলল, হান্ডস আপ।

সাইফুল কংফু মাস্টার ছিল। বিপদের সময় কি করা উচিত তার জানা। পিছন দিক। থেকে কথাটা শুনেছে। ঝর্ণাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিচ্ছে প করে ঘুরে গুণ্ডাটাকে দেখে সেখান থেকে জাম্প করে উড়ে এসে তার উপর পড়ল ।
গুণ্ডাটার চোখে ধা ধা লেগে গেল ।
তার মনে হল ভেল্কী দেখছে। ঘাের কাটিয়ে ওঠার আগেই সাইফুল তার উপর পড়তে দু’জনে মেঝেয় পড়ে গের। পিমতলটা গুণ্ডাটার হাত থেকে ছিটকে পড়ে দেয়ালের কাছে চলে গেল। সাইফুল তার গর্দানে কয়েকটা চাপ মারতে সে জ্ঞান হারাল।

অন্য গুণ্ডাটা থামের আড়াল থেকে দেখে তার চোখেও ভেল্কী বলে মনে হয়েছিল। সাথির অবস্থা দেখে সে সাবধান হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি থামের আড়াল থেকে বেরিয়ে ঝর্ণার একটা হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে করতে সাইফুলের দিকে পিস্তল তাক করে বলল, খবরদার, আর একচুল নড়বেন না, নচেৎ গুলি করতে বাধ্য হব। তারপর ঝর্ণাকে বলল, আপনার স্বামীকে যদি বাচাতে চান, তা হলে চলুন আমার সঙ্গে।।

ঝর্ণা তখন ভয়ে থর থর করে কাঁপছে। সে সাইফুলের দিকে তাকিয়ে কি করবে না করবে ভাবতে লাগল। গুণ্ডাটা অধৈর্য স্বরে বলল, কুইক।

দেরি দেখে মনিরা কাজের মেয়েটাকে সাইফুল ও ঝর্ণাকে ডাকতে পাঠিয়েছিল । সে বারান্দায় এসে ঐরকম ঘটনা দেখে প্রথমে খুব ভয় পেয়ে থতমত খেয়ে যায়। তারপর দৌড়ে ফিরে গিয়ে ব্যাপারটা মনিরাকে জানাল।

শুনে নাজনীন বলল, আম্মা তাড়াতাড়ি থানায় ফোন করে দাও, আমি ওদিকে দেখছি। কথা শেষ করে নাজনীন যখন বারান্দার দরজার পর্দা ফাক করে উঁকি মারল, তখন গুণ্ডাটা ঝর্ণাকে তাগিদ দিয়ে বলছে, আমার সঙ্গে না গেলে আপনার স্বামীকে। কুকুরের মত গুলি করে মারব।

| ঝর্ণা সাইফুলের চোখের দিকে তাকিয়েছিল। বুঝতে পারল, সে তাকে ইশারা করে। যেতে বলছে। ঝর্ণা ধীরে ধীরে পা পা করে এগােচ্ছে, এমন সময় নাজনীনকে মেঝেয়। দেওয়ালের কাছে পড়ে থাকা পিস্তলটার দিকে এগিয়ে যেতে দেখে সাইফল বলল নাজ তুই তাের হাতের লাঠিটা দিয়ে গুণ্ডাটার মাথায় খুব জোরে আঘাত কর।।

গুণ্ডাটার পিছনের দিকে থেকে নাজনীন আসছিল। সেদিক তাকিয়ে সাইফুলকে। কথা বলতে শুনে সত্য-মিথ্যা দেখার জন্য গুণ্ডাটা একবার মুখ ঘুরিয়ে দেখতে গেল। সাইফুল এই সুযােগের অপেক্ষায় ছিল। জাম্প করে উড়ে তার কাছে আসতে চাইল । কিন্তু এই গুণ্ডাটা আগেরটার চেয়ে বেশি চালাক। পিছনে এক মুহুর্তের জন্য তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে সাইফুলকে উড়ে আসতে দেখে পরপর তিনটে গুলি করল। প্রথম

দুটো মিস হলেও শেষেরটা সাইফুলের পেটে লাগল। ততক্ষণে সাইফুল তার ঘাড়ের উপর এসে পড়ে পিস্তলটা কেড়ে নিয়ে নাজনীনের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলল, থানায় জলদি ফোন করে দে। তারপর গুটার কানের নীচে ও তলপেটে কয়েকটা ঘুষি মেরে অজ্ঞান করে ফেলল।

তখন সাইফুলের রক্তে জামা কাপড় ভিজে মেঝেয় গড়িয়ে পড়ছে। গুণ্ডাটা অজ্ঞান হয়ে যেতে বসে পড়ে একহাতে পেট ধরে একটা চাকরকে দেখতে পেয়ে বলল, রশি দিয়ে এদের হাত-পা শক্ত করে বেঁধে ফেল।

ঝর্ণা এতক্ষণ ঘােরের মধ্যে ছিল। স্বামীর রক্ত দেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, আল্লাহ গাে একি হল? তুমি রহম কর। তারপর নাজনীনকে বলল, জলদি ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বল, এক্ষুনি মেডিকেল নিয়ে যেতে হবে। নাজনীন ছুটে বেরিয়ে গেল ড্রাইভারকে গাড়ি বের করার কথা বলতে।

মনিরা থানায় ফোন করে এসে সাইফুলের রক্ত দেখে সেও তাকে জড়িয়ে ধরে। কাঁদতে কাঁদতে বলল, কই দেখি কোথায় গুলি লেগেছে? সাইফুল গুলি খাওয়া জায়গাটা দু'হাত দিয়ে চেপে ধরে রেখেছে, তবু রক্ত গল গল করে বেরােচ্ছে। সে ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে আসতে লাগল। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, বুবু, ঝর্ণাকে তােমার হাতে তুলে দিচ্ছি, ওর পেটে বাচ্চা আছে, ওদেরকে তুমি দেখাে। তারপর উপরের দিকে তাকিয়ে বলল, আল্লাহপাক, তােমার ইশারা ছাড়া কোন কিছু হয়। । তুমি আমাকে ক্ষমা করাে। এদের সবাইকে হেফাজত করাে।

ঝর্ণা স্বামীকে বুকে করে ধরে রেখে বলল, কথা বলতে তােমার কষ্ট হচ্ছে, তুমি ।
এবার চুপ কর।
সাইফুল ঝর্ণার গালে গাল ঠেকিয়ে বলল, প্রিয়তমা আমার, তােমাকে নিয়ে বেশি দিন ঘর সংসার করা আমার ভাগ্যে নেই। তাই আল্লাহ আমার সমস্ত কামনা বাসনা পূরণ করে দুনিয়া থেকে তুলে নিচ্ছেন। ঝর্ণাকে কাঁদতে দেখে বলল, কাদছ কেন? তার। ইচ্ছায় চলে যেতে হচ্ছে। আল্লাহর কাছে ধৈর্য ধরার ক্ষমতা চাও।

এবার কান্না থামিয়ে আমাকে বিদায় দাও প্রিয়তমা। ঝর্ণা ভুলে গেল এখানে বড় ননদ, নাজনীন ও চাকর-চাকরানীরা রয়েছে। সে স্বামীর মাথা দু'হাত দিয়ে ধরে তার সারা মুখে চুমাে খেয়ে বলল, বিদায় তােমাকে আমি নিতে দেব না, যেমন করে থােক ইনশাআল্লাহ বাচাবই। তারপর নাজনীনকে দেখে। বলল, ড্রাইভার এখনও গাড়ি বার করে নি?।

ডাইভার গাড়ি বের করে সাহেবকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঘরে ঢুকে ঝর্ণার কথা। শুনতে পেয়ে বলল, তাড়াতাড়ি চলুন। সাইফুল টেনে টেনে বলল, শুধু শুধু তােমরা আমাকে মেডিকেলে নিয়ে যাচ্ছ। তারপর ঝর্ণাকে বলর, খুব পিয়াস লেগেছে, পানি দাও।। নাজনীন শুনতে পেয়ে তাড়াতাড়ি এক গ্লাস পানি নিয়ে এল।

ঝর্ণা গ্লাসটা স্বামীর মুখে ধরতে সাইফুল বিসমিল্লাহ বলে খেয়ে আলহামদুলিলা বলে ডান হারাল। সাইফলকে চুপ করে যেতে দেখে সবাই মিলে ধরাধরি করে গাড়িতে ত মেডিকেলে রওয়ানা দিল। চাকর-চাকরানী ছাড়া সবাই মেডিকেলে গেল। যাওয়ার সময় মনিরা চাকরদের বলল, পুলিশ এলে তাদেরকে ঘটনাটা বলে এদেরকে নিয়ে যেতে বলবে।

মেডিকেল আসার পর ডাক্তারা সাইফুলকে পরীক্ষা করে বলল, হি ইজ ডেড ।।
শুনে মনিরা ও নাজনীন হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।
আর ঝর্ণা প্রথমে কয়েক সেকেণ্ড থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল তারপর না ..... বলে স্বামীর বুকের উপর আছড়ে পড়ে জ্ঞান হারাল।


bangla love story free book

সমাপ্ত এই ভালোবাসার গল্প

ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন রইল এই শুভ কামনায় আপনার জন্য


Part: 1 Part: 2 Part: 3

Post a Comment

0 Comments