হযরত বড়পীর (রহঃ) এর নাম রাখা - বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী রহঃ এর জীবনী Part 12

Boro Pir Abdul Kadir Jilani Ar Jiboni,

হযরত বড়পীর (রহঃ)-এর নাম রাখা

সন্তা নদের সুন্দর নাম রাখাই হল সকল মুসলমান পিতা-মাতার কর্তব্য। অতএব সাইয়্যেদ
আবু খালেদ মুসা (রহঃ) অদৃশ্য বাণী শুনে পুত্রের নাম রাখলেন 'আবদুল কাদের। তিনি সেদিনই
পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে অনেক খাদ্য দ্রব্য উপহার উপটৌকন
বিতরণ করলেন। মহান আল্লাহ্ তা'আলার অসীম কুদ্রতের কথা স্বরণ করে পুত্রকে আল্লাহ্র
ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিলেন।

ঐতিহাসিকগণ বর্ণনা করেছেন, যে পুণ্য রাতে বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী
(রহঃ) জন্মগ্রহণ করলেন সে রাতেই আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সাঃ) এবং তার
সাহাবাগণসহ আবু সালেহ মুসা (রহঃ)-এর গৃহে আগমন করলেন এবং সকলকে নিয়ে তাঁর বংশের
আলাে পীরানে পীর মাহবুবে সােবহানী (রহঃ)-এর প্রতি দরদ পাঠ করতে লাগলেন- ইয়া রাব্বি
ইয়ানী মিল হুক্ধি মাহবুবিকা ওয়াহাবলি মিন ইশকি মা শুল্কিকা হযরত আবু খালেহ মুসা (রহঃ)-
এ অদৃশ্য দরূদ শুনে আশ্চার্যবােধ করছিলেন।

পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তণের প্রথম দিনে রােযা রাখলেন বড়পীর (রহঃ) 

মাতা উম্মে খায়ের হযরত ফাতেমা (রহঃ)-এর কোলে শিশু আবদুল কাদের খেলা করছেন।

সেদিন ছিল রমযানের প্রথম দিন। আর প্রথম রমযানের অতি প্রত্যুষে তিনি ভূমিষ্ট হয়েছিলেন।
সকাল হতেই মাতা উম্মে খায়ের ফাতেমা (রহঃ) দেখতে পেলেন সদ্যজাত শিশুটি স্থির শান্ত।
তিনি শিশুকে দুধ পান করাতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু শিশু কিছুতেই দুধ পান করছেনা। বারবার
চেষ্টা করেও তিনি সফল হলেন না। শিশু ভূমিষ্ট হয়ে মধুও দুধ পান করেছেন। তারপর হতে আর
কিছু পান করছেন না। এ চিন্তায় মাতা ফাতেমা (রহঃ) অস্থির হয়ে গেলেন।

আগেই আলােচনা করা হয়েছিল উনত্রিশে সাবান-আকাশ মেঘলা থাকার কারণে রমযান
মাসের চাদ দেখা যায় নি। পরদিন ত্রিশে সাবান না পহেলা রমযান তা কেউ স্থির করতে

পারছেনা। তারা সবাই সাধক হযরত সালেহ মুসা (রহঃ)-এর কাছে উপাস্থিত হল। হযরত আবু
সালেহ মুসা (রহঃ) বাড়িতে ছিলেন না। লােকেরা তাঁকে বাড়িতে না পেয়ে উম্মে খায়ের ফাতেমা
(রহঃ)-এর কাছে উপস্থিত হলেন। তাকে এই ব্যাপারে কিছু বলতে অনুরােধ করলেন।

সাইয়্যেদা উম্মুল খায়ের ফাতেমা (রহঃ) পর্দার আড়াল থেকে আগমণকারী লােকদের
কথাবার্তা শুনে বললেন, আপনারা ইসলামের শরীয়ত নিয়ম অনুসারে চলবেন। শরীয়তের নিয়ম
হল শাবান মাসের উনক্রিশ তারিখ কোন কারণে চাদ দেখা না গেলে কিংবা চাদ দেখার কোন নির্ভর
যােগ্য সাক্ষী না পেলে পরের দিন রােযা রাখা উচিত নয়।
সাইয়্যেদা উম্মুল খায়ের ফাতেমা (রহঃ) -এর এমন সময় স্মরণ হল যে, সুবহে সাদিকের পর
থেকে তাঁর সদ্য প্রসূত সত্তান কিছুতেই মধু কিংবা দুধ পান করছেনা। এক প্রহর বেলা গড়িয়ে
গেল এখনও সে দুধ পান থেকে বিরত রয়েছে। এটা স্মরণ হতেই তিনি আগত লােকদের উদ্দেশ্যে
বললেন-আমি ঠিক বৃঝতে পারছিনা। একটি বিষয়ে আমার দৃষ্টি পড়েছে তা হল আমার সদ্য প্রসূত
শিশুটি সুবহে সাদিকের আগে দুধ পান করেছে। কিন্তু সুবহে সাদিকের পর থেকে এই পর্যন্ত শত
চেষ্টা করেও তাকে দুধ বা মধু পান করাতে পারছিনা। এতে আমার মনে হয় সে রােযা রেখেছে।
আমার মনে হয় আজ পহেলা রমযান।

আগন্তুক লােকগুলাে জানতাে হযরত আবু সলেহ (রহঃ) একজন উঁচু পর্যায়ের সাধক ব্যক্তি
আর তাঁর স্ত্রী পুণ্যবতী মহিলা। তাদের ঘরে যে সন্তানটি এসেছে নিশ্চয় তাদের মত পুণ্যবান
হবেন। যারা সকালে সদ্যজাত শিশুটিকে দেখে গেছেন তারা একথা শুনে বিস্মিত হলেন। তারা
বললেন, আপনার সন্তান যখন দুধ ও মধু পান করছেনা এতে গভীর কোন রহস্য বিদ্যমান আছে।
নিশ্চয়ই আপনার সন্তান রােযা পালন করছে। তা না হলে এ পর্যন্ত কোন সাধারণ শিশুর পক্ষে দুধ
পান না করে থাকা সম্ভব নয়। তাহলে নিশ্চয়ই গতকাল চন্দ্র উদয় হয়েছে। আমরা মেঘের জন্য
তা দেখতে পাইনি। আজ পহেলা রমযান তাতে আমাদের আর কোন দ্বীধা-দ্বন্দু নেই। আমরা
রােযা অবশ্যই রাখব। মুহূর্তের মধ্যে সদ্যজাত শিশুর রােযা রাখার খবর প্রচারিত হয়ে গেল।

সবাই শিশুটিকে দেখার জন্য আসতে লাগল। তারা দেখল শিশুটি হাত পা ছুড়ে খেলা করছে।
কিন্তু দুধ বা মধু কিছুই পান করছেনা। তার মুখের সামনে এগুলাে আনলে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে
নেয়। "এভাবে সারাদিন কেটে গেল। মাগরিবের আযান হলে শিশুটি স্বাভাবিকভাবে দুধ পান
করলেন।
জন্মগ্রহণ করেই পীরানেপীর দস্তগীর হযেরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) রােযা পালন
করলেন। তিনি ইসলামের বিধান মেনে চললেন। এটা খুবই আশ্চর্যজনক ঘটনা। এ ধরনের ঘটনা
দুনিয়াতে আর নেই বললেই চলে । আসলে মহান আল্লাহ্ তাআলার কুদরতের শান বোঝার উপায়
নেই।

বৃদ্ধা মাতৃগর্ভে জন্ম

সাইয়্যেদা উম্মে খায়ের ফাতেমা (রহঃ)-এর বয়স যখন ষাট বৎসর তখন তিনি হযরত
আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)-কে গর্ভে ধারণ করলেন। সাধারণতঃ এই বয়সে কোন রমণীর
সন্তান হয়না। কিন্তু মহান আল্লাহর অসীম অনুগ্রহে স্বভাবের নিয়মে তাঁর বেলায় কার্যকরী হল না।
বড়পর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)-কে গর্ভে ধারণ করে তিনি ধন্য হলেন এবং
যথাসময়ে পুত্র সন্তান প্রসব করে আল্লাহর অলীর চন্দ্রমুখ দেখলেন। সাধারণত দেখা যায় পঞ্চাশ
কিংবা পঞ্চান্ন বৎসর বয়সের পর নারীদেহ সন্তান ধারণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তবে হযরত
বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)-এর শুভ জন্ম ও তাঁর অলী হওয়ার সুস্পষ্ট নিদর্শন তিনি
জন্মগ্রহণের মধ্য দিয়েই বিশ্ববাসীর কাছে এক অলৌকিক ঘটনার অবতারনা করে ছিলেন।

 বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী ( রহঃ ) এর জীবনী,

Post a Comment

0 Comments