পিতা-মাতার পরিচয়
একটি প্রবাদে আছে, যেমন বৃক্ষ তমন ফল। বড়পর হযরত আবদুল কাদের জিলানী
(বহঃ)-এর পিতা-মাতা দু'জনই ছিলেন মহান আল্লাহ্ তা'আলার প্রিয় বান্দা। তাঁরা দু'জনই ছিলেন
হযরত আলী (রহঃ)-এর বংশধর। সােনায় সােহাগা কাহাকে বলে আর। শুধু বংশধরই ছিলেন না।
তাঁরা উচ্চমানের একনিষ্ঠ তাপস ও সাধক ছিলেন। ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় পাবন্দ। হযরত
আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)-এর পিতা হযরত আবু সালেহ মুসা (রহঃ) ছিলেন আল্লাহ্
তাআলার একজন ওলী।
সে যে কত উঁচুমানের আল্লাহভক্ত ছিলেন তা তাঁর জীবনী পড়িলেই
বােধগম্য হওয়া যায়। মাতা উম্মুল খায়ের হযরত ফাতেমা (রহঃ)ও ছিলেন উচুস্তরের তাপস হযরত
আবদুল্লাহ সাইমেরী (রহঃ)-এর কন্যা। তিনি কখনও পর্দার বাহিরে যাননি। ইসলামের হুকুম
আহকাম পালন করেছেন একাগ্রচিত্তে। এ পর্দানশীল পূন্যবতী মহিলা হযরত হােসাইন (রাঃ)-এর
বংশধর ছিলেন। হযরত ফাতেমা (রহঃ) ছিলেন পবিত্র ও নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী। তাঁদের পাক
হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)-এর পিতা সাইয়্যেদ আবু সালেহ মূসা (রহঃ)-এর
যৌনকালের ঘটনাগুলাে হল। তখন তিনি
উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে রওনা করলেন। প্রবাসে কিছুদিন অতিবাহিত হবার পর তার খাদ্য শেষ
হয়ে গেল। তিনি খুব কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে লাগলেন।
একদা চারদিনের অনাহার অবস্থায় একটি নদীর তীরে বসে দূর্বল শরীরের ক্লান্তি দূর করার
জন্য বিশ্রাম করছিলেন। এক সময় তাঁর খুব ক্ষুধার জ্বালা অনুভূত হতে থাকে। তিনি নদীর পানির
দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছেন এবং মহান আল্লাহ্ তাআলার নাম মনে মনে স্মরণ করছিলেন।
ঠিক ঐ সময় একটি সাদা সেব ফল নদীর তীর ঘেঁষে ভেসে যেতে দেখলেন। সে বসা থেকে উঠে
নদীর তীর হতে সেব ফলটি তুলে আনলেন এবং ক্ষুধার তাড়নায় তা খেয়ে ফেললেন। ঐ মুহূর্তে
बा সেব ফলটি খাওয়ার পর মুহূর্তে তাঁর মনে ভাবের সৃষ্টি হয় যে, না জেনে না শুনে কারাে কাছ
থেকে অনুমতি না নিয়ে কার গাছের ফল খেয়ে ফেললেন। এ চিন্তা তার হৃদয়কে দোলা দিতে
লাগল । নিজের প্রতি তার ঘৃণা এসে গেল। সে কিভাবে এমন বড় ধরনের ন্যায় কাজ করলেন
এটাই তাঁর মনে হতে লাগল। না জানিয়ে কারও গাছের ফল খেয়ে ফেলা চুরি করারই মতই।
এই চিন্তায় তিনি অস্থির হয়ে গেলেন। এই অন্যায়ের কথা ভেবে তাঁর মন কেঁদে উঠল। তিনি স্থীর
হয়ে বসে থাকতে পারলেন না এই জন্য যে, আখেরাতে যদি ফলের মালিক এই ফলের দাবী করেন।
তবে তিনি তাকে কি উত্তর দেবেন? তিনি আর বিন্দুমাত্র দেরী না করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন।
মনে মনে চিন্তা করলেন যেভাবেই পারি ফলের মালিককে খুজে বাহির করবেন এবং তার কাছে
ফল খেয়ে ফেলেছি বলে ক্ষমা চেয়ে নিবেন। যদি ক্ষমা না চাই তাহলে পরকালে মুক্তির কোন পথ নাই।
সেব ফলটি খাওয়ার ঋণ মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আর অন্য কিছুই চিন্তা করতে পারছিলেন না।
অনেকক্ষণ হাঁটার পর নদীর তীরে একটি সেব ফলের বাগান দেখতে পেলেন। তিনি প্রচণ্ড রােদ্রের
ঝুলে আছে। তখন তিনি বুঝতে পারলেন এই বার্গানের গাছ থেকেই সেব ফলটি পড়ে নদীর
মালিককেও খুঁজে পাওয়া যাবে। অতঃপর তিনি আশেপাশের লােকদের কাছে জিজ্ঞেস করে।
জানতে পারলেন ফলের বাগানের মালক সাইয়্যেদ আবদুল্লাহ সাইমেরী (রহঃ)। তিনি ছিলেন।
একজন আল্লাহভক্ত দরবেশ। সাইয়্যেদ আবদুল্লাহ সাইমেরী (রহঃ) সব সময় আল্লাহ্ তাআলার
এবাদতে সময় কাটিয়ে থাকিতেন।
সাইয়্যেদ আবু সালেহ মুসা (রহঃ) মনে মনে ভবলেন তাকে যদি সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলে
তাঁর কাছে ফল খাওয়ার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি হয়তোবা তিনি ক্ষমা করে দিবেন। সাইয়্যেদ আবু
সালেহ মূসা (রহঃ) ক্ষমা পাবার আশায় তার বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলেন।
সাইয়্যেদ আবদুল্লাহ সারউমেরী (রহঃ)-এর কাছে খবর পাঠানাে হল যে, আপনার খুঁজে
একজন লােক এসেছে। তাঁর খুঁজে একজন লোক তাঁর বাড়িতে এসেছে জানতে পেরে সাইয়্যেদ
আবদুল্লাহ সাউমেরী (রহঃ) বের হয়ে আসলেন।
তাকিয়ে থাকতে পারলেন না। অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর আবু সালেহ মুসা (রহঃ)-এর আগমণের
কারণ গৃহকর্তার কাছে বললেন। আর মিনতী স্বরে ফল খাওয়ার জন্য ক্ষমা চাইলেন।
হযরত সাইয়্যেদ আবু সালেহ মুসা (রহঃ) ছিলেন খুব সুন্দর। তাঁর শারীরিক গঠন খুব সুন্দর,
জ্যোতির্ময় চেহারা দেখে সাইয়্যেদ আবদুল্লাহ সাউমেরী (রহঃ) অবাক হলেন। কিছুক্ষণ তার দিকে
তাকিয়ে চিন্তা করলেন, তাও কি সম্ভব? সামান্য একটা ফল যা পানির স্রোতে ভাসিয়া গেছে তা
খেয়ে ফেলেছে বলে তার মধ্যে অপরাধবােধ জাগ্রত হয়েছে এবং ক্ষমা প্রার্থনার জন্য এত দুর্গম
পথ পায়ে হেঁটে আমার কাছে এসেছে। এই ব্যাপারে তিনি যতই চিন্তা করতে লাগলেন ততই তাঁর
কাছে বিষয়টি অবাক লাগছে। এই মুহূর্তে তিনি কি করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না।
এই আগস্তুকের মধ্যে এমন একটা গুণ আছে যার সাহায্যে পৃথিবীর মঙ্গল হতে পারে। এই চিন্তার
মাঝে তার মনের মধ্যে একটি আকাংক্ষা উদিত হল। তা তিনি গােপন রেখে বললেন, হে যুবক!
তুমি কি জাননা, অন্যের কোন দ্রব্য যদি নষ্টও হয়ে যায় তবুও তা গ্রহণ করার তােমার কোন
অধিকার নেই। দ্রব্যের যে মালিক তার অনুমতি ছাড়া তা হাতে স্পর্শ করাও যায় না। তুমিতাে
আমার বাগানের সেব ফল আমার অনুমতি ছাড়া খেয়ে ফেলেছ এবং বড় রকমের অপরাধ করেছ।
আর এই অপরাধ আমি কিছুতেই ক্ষমা করতে পারবাে না।
সালেহ মুসা (রহঃ) বিষণ চিন্তায় পড়ে গেলেন। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে মনে তিনি যা
ভেবেছিলেন এখানে এসে সব কিছু উল্টা-পাল্টা হয়ে গেল। তাঁর কাছে ক্ষমা পাবেন না যেনে
সাইয়্যেদ আবু সালেহ মূসা (রহঃ) খুব অস্থির হয়ে গেলেন। তারপরও তিনি আবার অনুনয় বিনয়
বরে বলছেন-হুজুর! এখন আমার কাছে এমন কোন অর্থ নেই যা দিয়ে আপনার ফলের দাম
পরিশােধ করতে পারিব। আমি না জানিয়া আপনার ফল থেয়ে বড় অন্যায় করেছি। আর আমি
সেই অন্যায় বুঝতে পেরেই আপনার কাছে আমি এসেছি। আপনি দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে
দিন। আর আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন তাহলে আমি এ অপরাধের পাপ হতে কিছুতেই
মুক্তি পাবনা। ফলে আমি আমার আল্লাহ্ তাআলার কাছে অপরাধী হয়ে যাব। হুজুর তাই আমি
আপনাকে করজোরে বলছি, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিয়ে আমাকে আখেরাতে মুক্তির ব্যবস্থা
করে দিন। আমি আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকব।
এর মন গলে গেলেও তিনি তা প্রকাশ করলেন না। তখন তিনি নিজের ইচ্ছাকৃতভাবে কঠোর হয়ে
বললেন-হে বিদেশী যুবক! এই পৃথিবীর নিয়ম হল এখানকার বাসিন্দারা তাদের প্রিয় জিনিসের
মায়া ত্যাগ করতে পারেনা। আমি আমার বাগানের ফলের দাবী ত্যাগ করতে পারিবনা। এই ফল
আমার কাছে মহামূল্যবান। এখন বল, কেমন করে আমি তার দাবী ছাড়তে পারি। তুমি শুধু শুধু
আমার কাছে ক্ষমা প্রাথনা করছ।
(রহঃ) ভয়ে অস্থির হলে উঠলেন। তখন তিনি নিরুপায় হয়ে কাঁদতে শুরু করলেন। তার কান্না
দেখে হযরত আবদুল্লাহ সাউমেরী (রহঃ)-এর মন নরম হল না। তিনি তাঁর দাবিতে অটল
রইলেন। হযরত আবু সালেহ মুসা (রহঃ) অবশেষে আবারও করুণ কণ্ঠে বললেন-আমার এই
অপরাধ কেমন করে ক্ষমা পেতে পারি তাই বলুন। আপনি আমাকে ক্ষমার রাস্তা না দেখিয়ে দিলে
আমি কেমন করে এই অপরাধের পাপ নিয়ে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা আলার দরবারে হাজির
তখন হযরত আবদুল্লাহ সাউমেরী (রহঃ) হযরত আবু সালেহ মুসা (রহঃ)-কে বললেন, হে
আবু সালেহ মুসা! তুমি এতটা ভয় পেয়াে না। কারণ তুমি যদি সত্যিকারের আল্লাহভক্ত হয়ে থাক
আর পরকালের কঠিন শাস্তিকে ভয় কর তাহলে আমি তােমাকে একটি সুন্দর পথ দেখিয়ে দিতে
পারি। তুমি ইচ্ছা করলে আমার সেই পরামর্শ গ্রহণ করতে পার। আমার পরামর্শ হল, তুমি আজ
থেকে আমরি ভূত্য হিসেবে আমার এখানে অবস্থান করে বারটি বছর কাজ করবে। তােমার কাজ-
কর্ম দেখে আমি বার বছর পর বিবেচনা করব তােমার অপরাধ ক্ষমা করা যাবে কি-না। সত্যিই
যদি তুমি আমার মন জয় করতে পার তাহলে তােমাকে আমি ক্ষমা করে দেব। তাছাড়া আর কোন
পরামর্শ আমার কাছে নাই।
এর অন্তরে শান্তি ফিরে আসল। তিনি ফলের বাগানের মালিকের পরামর্শে রাজি হলেন। ঐ দিন
থেকেই একটি ফল খাওয়ার অপরাধ ক্ষমা পাওয়ার জন্য তিনি গৃহকর্তার বাড়িতে ভূত্যের কাজ
আরম্ভ করলেন। হযরত আবদুল্লাহ সাউমেরী (রহঃ) কিন্তু হযরত আবু সালেহ মুসা (রহঃ)-কে তাঁর
পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে মনে করতে লাগলেন। তিনি হযরত আবু সালেই মুসা (রহঃ)-
কে তার জ্ঞান প্রদান করতে লাগলেন। মারেফাতের কঠিন নিয়ম খুব যত্ন সহকারে শিক্ষা দিয়ে
তাঁর চরিত্র গঠনে সহযােগিতা করতে লাগলেন, জ্ঞান সাধনা ও কঠিন এবাদতের মাঝ দিয়ে তাঁর
বারটি বছর শেষ হয়ে আসল।
উচ্চ পর্যায়ের সাধকের সংস্পর্শে এসে এবং দীর্ঘ বারটি বৎসর তাঁর কাছে জ্ঞান সংগ্রহ করে উত্তম
চরিত্র গঠন করতে সক্ষম হলেন। এরপর বার বছর শেষ হবার পর হযরত আবু সালেহ মুসা (রহঃ)
তাঁর মনিবকে বললেন, হুজুর! এখনতাে আমার বার বৎসর পূর্ণ হয়েছে, তাহলে আপনি আমাকে
ফল খাওয়ার অপরাধ ক্ষমা করে দিন।
কথাগুলাে ভুলে গেছ? তখন আমি তাে বলেছিলাম বারটি বৎসর আমার সেবা-যত্নে হাজির থাকার
পর আমার মন জয় করতে পারলে তবে ক্ষমা করা যেতে পারে। এখন আমার আরেকটি প্রস্তাব
শােন। যদি সত্যিই তুমি ক্ষমা পেতে চাও তবে আমার আর একটি প্রস্তাব তােমাকে পালন করতে
হবে। তানা হলে ফল খাওয়ার অপরাধ ক্ষমা করা আমার পক্ষে কিছুতে সম্ভব নয়।
হযরত আবু সালেহ মুসা (রহঃ) ভয়ে ভয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আমার মালিক! দয়া
করে বলুন আপনার সেই প্রস্তাবটা কি?
কন্যা আছে। আমার সেই কন্যা অন্ধ, খণঞ্জ, মুক ও বাধর। সে বয়স প্রাপ্ত হয়েছে। তাকে বিবাহ।
দেবার উপযুক্ত পাত্র হিসেবে আমি তােমাকে পছন্দ করেছি। তুমি তাকে যদি বিয়ে করতে রাজি
হও তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তােমার অপরাধ ক্ষমা পাবে। তা না হলে তােমাকে ক্ষমা করা আমার সম্ভব
হবে না।
ভয়ানক প্রস্তাব যে তার কাছে হতে আসবে তা তিনি কখনও ভাবতে পারেন নি। তাঁর মুখ হতে
কোন কথাই বের হলনা। মনে মনে ভাবলেন আমি যদি তাঁর এই প্রস্তাব গ্রহণ না করে তাহলে
আমার সেই অপরাধের ক্ষমা পাব না। কিয়ামতের দিন ঋণের বােঝা মাথায় করে মহান আল্লাহর
বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। তাহলে এখন তিনি কি করবেন। কিছুক্ষণ তিনি চিন্তা করলেন।
তারপর সঙ্গে সঙ্গে মন স্থির করে ফেললেন। আসলে এই দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট পরকালের বিপদের
কাছে অতি তুচ্ছ। তখন তিনি অতি নম্র কণ্ঠে বললেন, আমার মালিক! আমি আপনার প্রস্তাব গ্রহণ
করলাম।
হলেন এবং সেদিনই যথানিয়মে তাঁর কাছে কন্যার বিবাহ দিলেন।
এরপর হযরত আবু সালেহ মুসা (রহঃ) যখন বাসর ঘরে ঢুকলেন, তখন দেখলেন একজন
সুন্দরী রূপসী যুবতী কন্যা বসর ঘরে বসে আছে। তার হাত, পা, চোখ, কান সবই ভাল অবস্থায়
আছে। সেই কন্যা চোখে দেখে, কথা বলেন, কানে শুনেন এবং হাঁটতেও পারেন। এতে হযরত
আবু সালেহ মুসা (রহঃ) চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। তাঁর শ্বশুর কি বলে তাঁর কাছে বিয়ে দিলেন আর
এখন তিনি কি দেখছেন? তাঁর মনে সন্দেহ হল যে, তাকে কোন পরীক্ষা করা হচ্ছে না তাে? এই
কথা চিন্তা করে তিনি বাসর ঘরে অবস্থান করা ঠিক মনে করলেন না, তাই তিনি তখনই বাসর
ঘর থেকে বের হবার জন্য প্রস্তুতি নিলেন এবং দরজার কাছে গেলেন। ঠিক সে মুহূর্তে তাঁর শ্বশুর
স্মৃতহাস্য সেখানে এসে উপস্তিত হলেন এবং তাঁর হাত ধরে বাসর ঘরে নিয়ে গেলেন।
দ্বিধাদ্বন্ধে আছ। কিন্তু দ্বিধাদ্বন্ধের কিছু নেই। এই কন্যাই তােমার পবিত্র স্ত্রী এবং আমার কন্যা।
আমি তাকে খণঞ্জ বলেছি এই কারণে যে, আজ পর্যন্ত সে তার পা দ্বারা কখনও হেটে পর পুরুষের
কাছে যায়নি। আর তাকে মুক বােবা বলেছি এজন্যে যে, আজ পর্যন্ত তার মুখের আওয়াজ কোন
পর পুরুষ শুনতে পারেনি। আমি তাকে বধির বলেছি এজন্যে যে, সে এখনও পর্যন্ত কোন পর
পুরুষের কণ্ঠস্বর শুনতে পায়নি। তাকে অন্ধ বলেছি এর কারণ হল, সে এখনও কোন পর পুরুষ
তার চোখ দিয়ে দেখেনি। অতএব, আম তােমার কাছে আমার কন্যার যে অবস্থা বর্ণনা করেছিলাম
তা একেবারে মিথ্যা নয়। তবে তােমার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে আমি পরিষ্কারভাবে না বলে এভাবে
ঘুরিয়ে বললাম কেন? তার একমাত্র কারণ হল-তুমি যেদিন সেব ফল খেয়েছিলে এবং সে ব্যাপারে
আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে এসেছিলে, সেদিনই আমি তােমার সম্পর্কে একটি ধারণা পােষণ
করেছিলাম। তার পর আস্তে আস্তে যখন বুঝতে পারলাম যে, আমার ধারণা মিথ্যা নয়।
পরীক্ষার জন্য আমার কন্যার ব্যাপারে তােমার কাছে ঐরূপ বর্ণনা দিয়েছিলাম। সে পরীক্ষায়ও
তুমি' আল্লাহ্ তা'আলার অশেষ রহমতে যাগ্যতার সহিত উত্তীর্ণ হয়েছ। আজ আমি আনন্দিত
যেহেতু মহান আল্লাহ্ তা'আলা আমার মনের আশা পূরণ করেছেন।
খুব আনন্দিত হয়ে মহান আল্লাহ্ তা আলার দরবারে শােকরিয়া আদায় করে বললেন, হে পরােয়ার
দেগার! তােমার অনন্ত মহিমার কোন কিছুই মানুষের জানা নাই। তুমি মহান, পবিত্র!
এরপর হযরত আবদুল্লাহ সাউমেরী (রহঃ) তাঁর কন্যা এবং জামাতাকে তাঁর পাশে বসিয়ে
দুহাত তুলে আল্লাহ্ তা আলার কাছে দোয়া করলেন-হে মহান আল্লাহ্! তােমার এই দুজন নেক
বান্দার দাম্পত্য জীবন সুখ ও শান্তিতে পূর্ণ করে দাও। সংসার জীবনে তাদেরকে সুখী করে দাও।
এদের ইহকাল ও পরকাল শান্তিপূর্ণ করে দাও। তাদেরকে এমন একজন নেক সন্তান দান কর যার
মাধ্যমে তাদের মুখ উজ্জ্বল হয়।
উপরের বিবরণ থেকেই উপলক্দি করা যায় যায় বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী
(রহঃ) কেমন পুণ্যবান পিতা-মাতার সন্তান হিসেবে দুনিয়ায় আগমণ করেছিলেন তাতে সন্দেহের
কোন অবকাশ নেই।
0 Comments
Please Don't Send Any Spam Link