মাতার আদেশ প্রদান এবং বড়পীর (রহঃ) এর বাগদাদ যাওয়ার মনােভাব Part 3 - Boro Pir Abdul Kadir Jilani

মাতার আদেশ প্রদান এবং বড়পীর (রহঃ) এর বাগদাদ যাওয়ার মনােভাব

বাগদাদ যাওয়ার মনােভাব

সাওয়ানেহ্ ওমরীয়ে হযরত গাওসুল আযম' গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, তাঁর বয়স যখন সতের
বছর, তখন একবার তিনি আরাফার দিনে নিজের গাভকে চড়াবার জন্য মাঠের দিকে নিয়ে
যাচ্ছিলেন, ঠিক ঐ মুহূর্তে তাঁর গাভীটি পেহন দিকে মুখ ফিরিয়ে মানুষের ভাষায় তাঁকে বলতে
লাগল, (ইয়া আবৃদাল কাদের! মা লেহাযা খুলেক্তা ওয়ালা বেহাযা উমেরতা।) 'হে আবদুল
কাদের! এই কর্মের জন্য তােমাকে সৃষ্টি করা হয়নি এবং এই কর্মের জন্য তােমাকে আদেশ করা
হয়নি!

তিনি শৈশবকাল থেকেই এই ধরনের গায়েবী আওয়াজ বহুবার শুনেছেন; অতএব গাভীর
কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়েছিলেন, কিন্তু ভয় পাননি। এতে তিনি বুঝতে পারলেন যে, এই সমস্ত
পার্থিব ও গার্হ্যস্থ কাজ-কর্ম ত্যাগ করে আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে অগ্রসর হবার জন্য আল্লাহ্
তা'আলার পক্ষ থেকে সতর্কবাণী আসছে। এই কারণে তাঁর জ্ঞান-পিপাসু মন জ্ঞান অর্জনের জন্য
অস্থির হয়ে উঠল।
 
এই সম্পর্কে হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) বলেন-গাভীর মুখে সতর্কবাণী
শুনার পর আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম আর এই ব্যাপারে ভাবতে ভাবতে আমি নিজের গৃহের
ছাদের ওপরে গিয়ে উঠলাম। ছাদের উপরে উঠে আমি এক বিচিত্র দৃশ্য দেখতে পেলাম। সুদৃরবর্তী
আরাফাতের ময়দান আমার চোখের সম্মুখে দেখতে পাচ্ছি। অনেকগুলাে হাজী জামাত এরহাম
বেঁধে সেখানে দাঁড়ানাে অবস্থায় আছে। এই বিচিত্র দৃশ্য দেখে আমি আল্লাহ্ তা আলার প্রতি
আমার এমন দৃঢ় আকর্ষণ হল যে, আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না। দ্বীনী এলম ও মারেফাত
শিক্ষা গ্রহণের জন্য বাগদাদ যাওয়ার মনস্থির করে ফেললাম।

তখন সাথে সাথে ছাদ থেকে নেমে
মমতাময়ী মাতার সেবা-যত্নে উপস্থিত হলাম এবং মাতার কাছে আরয করলামঃ 'আম্মাজান! দ্বীনী
ইম ও মা'রেফাত শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য আমার হৃদয়ে আগ্রহ দুর্দমনীয় হয়ে পড়েছে। আপনি
আমাকে আল্লাহ্ তা আলার রাস্তায় ওয়াক্ফ করে দিন। আমাকে অনুমতি দেন, আমি বাগদাদ
শহরে গিয়ে দ্বীনীইলম তথা তাফ্সীর হাদীস ফেকাহ্ প্রভৃতি বিষয়ে উচ্চতম জ্ঞান অর্জন করি এবং
শ্ৰেষ্ঠ ওলীআল্লাহ্গণের সাক্ষাৎ লাভ করে আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করতে পারি।

হযরত বড় পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) আরও বলেন, 'সেই সময়ে আমার আম্মাজান
খুবই বৃদ্ধা ছিলেন। আমি ছাড়া সংসারে তাঁর দেখাশুনা ও খেদমত করার মত আর কেউই ছিল
না। তবুও সে নিজের এই অসহায় অবস্থার দিকে বিন্দুমাত্র লক্ষ্য না করে শুধুমাত্র আমার উচ্চ
পর্যায়ের দ্বীনী ইলম শিক্ষা এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভের প্রতি নজর দিলেন এবং খুব খুশি মনে
আমাকে বাগদাদ যাওয়ার অনুমতি দিলেন।

Post a Comment

0 Comments